মুক্তমত, সিলেট :: দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট পাশ হয়েছে। এ বাজেটে সংসদের বিরোধীদল কিছু বিষয় কর্তনের দাবি তুলেছিল। কিন্তু সরকার দলের কণ্ঠ ভোটে সেই দাবি টিকেনি। তাই সরকার যেভাবে বাজেট প্রস্তাব করেছে সেই অনুযায়ী বাজেট পাশ হয়েছে।
এবারের বাজেটে বড়লোকদের নানা সুবিধা দেয়া হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশী সুবিধা পেয়েছেন যারা বিপুল কালো টাকার মালিক তারা। কারণ এখন এসব কালো টাকার মালিকরা এখন কোন ধরণের বাঁধা ছাড়াই টাকাকে সাদা করতে পারছেন। এছাড়া বড়লোকদের জন্য বাজেটে আর অনেক ধরণের সুযোগ সুবিধার রয়েছে। তবে ঋণ খেলাপিদের বেলায় দেশের ইতিহাসে আর কোন অর্থমন্ত্রী এতো উদার হয়েছেন কি না আমাদের জানা নাই। কারণ ঋণ খেলাপিদের যে সুযোগ সুবিধা রাষ্ট্র দিচ্ছে বা দিয়েছে, তা কোনভাবেই তাদের পাপ্য নয়। কিন্তু সরকার তা দিচ্ছে!
অথচ যাদের প্রতি সরকারের নজর দেওয়ার কথা, যাদের বেলায় সরকার উদার হওয়ার কথা। সেই মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের বেলায় সরকার উল্টো কঠোর হয়েছে। বাজেটে এসব শ্রেণির জন্য এমনিতেই কিছু নাই। উল্টো তাদেরকে পৃষ্টে মারার সকল আয়োজন করেছে রাষ্ট্র। সর্বশেষ জনমত উপেক্ষা করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।
”কিন্তু উল্টো আমাদের দেশ। সরকার সমাজের এক শ্রেণির প্রতি উদার আর আরেক শ্রেণিকে পৃষ্টে মারার আয়োজন করে আসছে। প্রতিবছর নানাভাবে সরকার সমাজের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তকে চাপে ফেলে দিচ্ছে। কারণ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির খড়গ সরাসরি সাধারণ মানুষের ঘাড়ে পড়বে। এর প্রভাব পড়বে সব সেক্টরে।”
গ্যাসের নতুন মূল্যবৃদ্ধির ফলে আবাসিক গ্রাহকদের রান্নাঘরে যাদের এক চুলা আছে, তাদের ৭৫০ টাকার পরিবর্তে প্রতি মাসে দিতে হবে ৯২৫ টাকা। দুই চুলার গ্রাহকদের প্রতি মাসে ৮০০ টাকার পরিবর্তে দিতে হবে ৯৭৫ টাকা।
গৃহস্থালিতে যাদের গ্যাসের মিটার রয়েছে, তাদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহারের জন্য ৯ টাকা ১০ পয়সার পরিবর্তে ১২ টাকা ৬০ পয়সা দিতে হবে। মিটারে ৩৮.৪৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগেও ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। অথচ একই দিন ভারতে রান্নার গ্যাসের (সিলিন্ডারে ১৪ দশমিক ২ কেজি এলপি গ্যাসে) দাম ১০০ রুপি ৫০ পয়সা কমিয়েছে। দাম কমায় সিলিন্ডার প্রতি ভর্তুকিহীন রান্নার গ্যাসের দাম হবে ৬৬২ রুপি ৷ এখন ভর্তুকিযুক্ত গ্যাসের দাম সিলিন্ডার প্রতি ৪৯৪ রুপি ৩৫ পয়সা৷ ১৯ কেজি বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম ১৮৭ রুপি ৫০ পয়সা কমিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা। এর ফলে নতুন দাম হয়েছে ১ হাজার ১৮৮ রুপি ৫০ পয়সা।
“কিন্তু উল্টো আমাদের দেশ। সরকার সমাজের এক শ্রেণির প্রতি উদার আর আরেক শ্রেণিকে পৃষ্টে মারার আয়োজন করে আসছে। প্রতিবছর নানাভাবে সরকার সমাজের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তকে চাপে ফেলে দিচ্ছে। কারণ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির খড়গ সরাসরি সাধারণ মানুষের ঘাড়ে পড়বে। এর প্রভাব পড়বে সব সেক্টরে।”
এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। শীতের মৌসুমেও এমন কোনো সবজি নেই যেটি ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যায়। চালের দাম বেড়েছে, অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যও আকাশছোঁয়া। বাড়ি ভাড়া বেড়েছে। এই অবস্থায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরেকটি বড় উদাহরণ হলো বাজেটে মোবাইল ফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ নির্ধারণ। বর্তমানে মোবাইল ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপিত রয়েছে। এর সঙ্গে আরও ২ শতাংশ সারচার্জ আরোপিত রয়েছে। সব মিলে এ খাতে করের হার ২২ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকা মোবাইলে ভরলে কথা বলার সময় এ থেকে ২২ টাকা কর হিসাবে কেটে নেয়া হয়। এই করের সঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোনে কথা বলার ওপর আরও ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে এ খাতে সম্পূরক শুল্কের হার বেড়ে ১০ শতাংশে দাঁড়াচ্ছে। ভ্যাটের হার অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে এই খাতে মোট করের হার দাঁড়াবে ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ মোবাইল ফোনে কথা বলার ওপর প্রস্তাবিত কর কাঠামো বহাল থাকলে আগামী ১ জুলাই থেকে কথা বলার খরচ বেড়ে যাবে। তখন প্রতি ১০০ টাকায় ২৭ টাকা কর দিতে হবে। এখন দিতে হয় ২২ টাকা। এর প্রভাব নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াবে।
এভাবে দিনের পর দিন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনের ব্যয় বেড়েছে। সরকার যেভাবে যা নির্ধারণ করছে, মানুষ তা মেনে নিয়েছে। কারণ মানুষের প্রতিবাদ করার সাহস নাই বা মানুষ প্রতিবাদ করার জায়গাটিও নাই। কারণ সবাই নিজেকে ভেজাল মুক্ত রাখতে চায়। আর সেই ভেজালমুক্ত রাখতে গিয়ে আমাদের উপর যা চাপিয়ে দেওয়া হয় আমরা তা মেনে নেই।
এছাড়া প্রত্যেক গণতান্ত্রিক দেশে শক্তিশালী বিরোধীদলের প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে তা নেই। বিএনপি বা অন্যান্য যে সকল দল আছে তারা শুধু সভা-সেমিনারে সরকারের সমালোচনা করতে পারবে। সরকারের কাছ থেকে কোন কিছু আদায় করার ক্ষমতা নাই। এজন্য দেশের বড় চোরেরা ভালো থাকলেও সাধারণ মানুষ ভালো নেই।
লেখক : আহমেদ ইমরান, গণমাধ্যম কর্মী
email : Ahmedemran135@gmail.com