নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিন দিন দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। দালাল সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এই সিন্ডিকেটের কাছে অনেকটা অসহায়।
একসময় এই দালাল চক্রের সদস্যদের দেখলেই আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে তুলে তোলে দিতেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ব্রিগে : জেনারেল ডা. এ কে মাহবুবুল হক।
দালালদের বিরুদ্ধে কটোর ভূমিকা রাখায় দালালরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়।
কিন্তু এই দালাল চক্র এত শক্তিশালী মাহবুবুল হক জানেননি বিদায় হাসপাতাল থেকে উনার বদলি হয়ে চলে যেথে হল।
বর্তমান পরিচালক যোগদানের পর থেকে দালালরা আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে।
এই দালাল চক্রের নেপথ্যে রয়েছে নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্লাড সেন্টার ও ফার্মেসি মালিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিডিকেলে কর্মরত অনেকেই দাবি করেন দালালদের নেতৃত্ব দিচ্ছে মেডিকেলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা, তারা নিয়মিত দালালদের কাছ থেকে বখরা আদায় করে থাকে বলে অভিযোগে করেন তারা।
মেডিকেল পুলিশের কনস্টেবল পদে কর্মরত একজন প্রতিদিন সন্ধার পর হলেই দালাল চক্রের নেপথ্যে থাকা ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্লাড সেন্টার ও ফার্মেসি থেকে দালালদের জন প্রতি ২শ টাকা করে আদায় করে।
সম্প্রতি, হাসপাতালের ৬নং ওয়ার্ডে ডিউটিতে থাকা সানমুন কোম্পানীর স্টাফ তবারক আলী (তুহিন) পরিক্ষার জন্য কানাইঘাট উপজেলার এক রোগীকে নিয়ে যায় বাহিরের সিলেট মেডিক্যাল সেন্টার নামে ফার্মেসীর দালাল হামিদের কাছে।
পরে রোগীর রক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তুহিনের মাধ্যমে রক্ত নিয়ে দালাল হামিদ তার নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার যাওয়ার কথা বলে। মেডিকেলের বাহিরে গিয়ে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে পরীক্ষার কথা বলে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় হামিদ।
পরে রোগীর স্বজনরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করে এরপর পুলিশ সানমুন কোম্পানীর স্টাফ তবারক আলী (তুহিন)কে পরীক্ষার জন্য রক্ত দেয়ার অপরাধে তাকে আটক করে থানায় পাঠিয়ে দেয়, কিন্তু ওই দালাল হামিদকে পুলিশ আটক করতে পারেনি।
এই দালার চক্রের হাতে জিম্মি মেডিকেলের স্টাফ, জিম্মি হয়ে পড়েছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
এভাবে দালালি চলতে থাকলে : হুমকির মুখে পড়বে স্বাস্থ্য সেবা। এমন মন্তব্য স্থানীয় সচেতন মহলের।
সরেজমিন দেখা যায় হাসপাতালের ভেতর ঘুরাঘুরি করছেন দালাল চক্রের সদস্যরা। কোনো রোগী হাসপাতালে আসলেই তার সঙ্গে আসা আত্মীয়-স্বজনদের পিছু নিচ্ছে দালালরা। উন্নত চিকিৎসার নামে তাদের ক্লিনিকে যেতে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ আবার রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ওষুধ কেনার জন্য ফার্মেসিতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল জানান, হাসপাতাল থেকে কোনো রোগীকে ক্লিনিকে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাতে পারলে তারা ওই রোগীর মোট বিলের ২৫ ভাগ পেয়ে থাকেন। এছাড়া ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনলেও তারা নির্ধারিত একটি কমিশন পেয়ে থাকেন।
ফলে শোষিত ও বঞ্চিত হচ্ছে গ্রাম গঞ্জ থেকে আসা অসহায় দরিদ্র রোগীরা। পুরো হাসপাতাল দাবরিয়য়ে বেড়ায় দালাল চক্র। সুযোগ বুঝে কিছু ফার্মেসির মালিক তাদের নিয়োগকৃত দালালদের ডিউটি তদারকি করতে হাসপাতালে আসেন। ফলে স্বল্প খরচে চিকিৎসার আশায় গ্রাম গঞ্জ থেকে আসা রোগীদের গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা।
এ ব্যাপারে ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ইউসুফুর রহমানের সাথে মোটোফনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।