সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক::১২ বছরে মা-বাবাকে হারায় আমির উদ্দিন। ক্ষুধা লাগলে মানুষের রান্না ঘরের খাবার খেয়ে মা-বাবার কবরের পাশে শুয়ে পড়ত সে। এ অভিযোগে সালিশসহ কারাবাস হয় তার। অবশেষে এক পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতায় নতুন জীবন পায় সে।
আমির সুনামগঞ্জ সদরের রঙ্গারচর ইউপির বিরামপুর গ্রামের রাকিব আলীর ছেলে। দুই বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়।
সহযোগিতাকারী সুনামগঞ্জ সদর থানার এসআই সোহেল রানা বলেন, অল্প বয়সে মা-বাবাকে হারানো আমির ঘোরাঘুরি ও খেলাধুলায় মত্ত ছিল। তার পরিবারে আয় করার মতো কেউ না থাকায় অভাব লেগেই থাকত। সে মানুষের ঘরে খাবার খেয়ে বাবা-মার কবরের পাশে শুয়ে থাকত। এই অভ্যাসের জন্য সালিশ ডাকা, ও অনেক মারধর করা হতো। প্রথমে বিদ্যালয়ে গেলেও পড়ালেখা বেশি দূর এগোয়নি তার। বাবার চায়ের দোকানে চা বিক্রি করে সংসার চালাত বোন। সেই দোকান চলেনি বেশি দিন।
এসআই আরো বলেন, অভাবের কারণে সে বেপরোয়া হয়ে উঠে। তিন মাস আগে ঘর ভাঙচুরের অভিযোগে এ কিশোরকে পুলিশে দেন তার চাচা। তাকে আটক করে থানায় এনে তার জীবনের গল্প শুনি। তার কথা শুনার পর সে মাংস দিয়ে ভাত খাওয়ার আবদার করে। তখন সে অনেকবার মাংস দিয়ে ভাত খাবে বলে চিৎকার করে। পরে তাকে আদালতে পাঠাই। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, তাকে কারাগারে রেখে আমি স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। বিবেকের তাড়নায় এক সপ্তাহের মধ্যে আদালত থেকে জামিন নিয়ে আমার কাছে রাখি। অসহায় জীবন ও মুখের ভাষা আমাকে বিচলিত করেছিল। দুই দিন রেখে চাহিদামত গরু, মুরগীর মাংস দিয়ে ভাত খাওয়াই। পরে তাকে নিয়ে পৈতৃক ভিটায় যাই।
তিনি আরো বলেন, বাবার ভিটায় নিয়ে যাওয়ার পর তার আত্মীয়রা অনেক বাধা দেন। তাদের বাধা-নিষেধ উপেক্ষা করে বন্ধ থাকা দোকান খুলে দেই। ভাঙাচুরা টিনের বেড়া, চৌকি আর চারটি কাপ, পুরাতন কলসি ও একটি ভাঙা কেতলি দিয়ে তাকে দোকানে বসাই। নিজের উদ্যোগে তাকে মালামাল কেনার জন্য টাকা দেই। ভাঙাচুরা দোকানে ৫৮ ভ্যানগাড়ি মাটি দিয়ে ভরাট করি। শ্রমিক দিয়ে সেখানে মেরামত করে দিয়েছি। পরে এক ডজন কাপ পিরিচ, দুটি জগ কিনে দেই। এছাড়া ক্রেতা বাড়ার জন্য ৩২ ইঞ্চি টেলিভিশনের ব্যবস্থা করে দেই।
কিশোরের ব্যবসার নিশ্চয়তা সম্পর্কে সোহেল রানা বলেন, আমির নিয়মিত ব্যবসা পরিচালনা করছে কিনা, সেই তদারকির জন্য সাদা মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত গোলাম রব্বানী ভাইকে নিয়োজিত করি। এখন সে দিনে তিন হাজার টাকার চা, বিস্কুট, পান, সুপারি বিক্রি করতে পারে। এই বিক্রি থেকে এক থেকে দেড় হাজার টাকা লাভ হয়। অভাবের ছোবল থেকে মুক্ত এতিম আমিরের মুখে হাসি দেখে আমি তৃপ্তি পাই।
এদিকে, হাওড় রক্ষা বাধ পরিদর্শনের সময় আমিরের দোকানে চা পান করেন সদর ইউএনও ইয়াসমিন নাহার রুনা ও সদর থানার ওসি মো.শহিদুল্লাহ। আমিরের জীবনের কথা শুনে অভিভূত হন তারা।
সিলেট৭১নিউজ /ডেইলিবাংলাদেশ/এমআর