সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক:: অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়েছে বিরল রোগে আক্রান্ত ২৭ বছর বয়সী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জহিরুল ইসলামের। গত বুধবার রাত ১১টার পর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কথা বলার সুযোগ পান তিনি। এসময় তার রোগের বর্ণনা ও পরপর ৬ বার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি তুলে ধরেন জহিরুল। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২০ মিনিট কথা বলেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসে শুক্রবার জাগো নিউজকে জহিরুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমানের সোহাগের একান্ত প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়েছে। এর আগেও সোহাগ ভাই (ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি) আমার চিকিৎসার ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীসহ একাধিক স্থানে আমাকে নিয়ে গেছেন। তার সহযোগিতা না পেলে এতদিন হয়তো বেঁচে থাকা হতো না। এছাড়াও সহযোগিতা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু ভাই।
তিনি বলেন, অনেক মানুষের ভিড়ে প্রধানমন্ত্রী আমার সব কথাগুলো গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন। প্রায় ২০ মিনিট আমার রোগের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলেছি উনাকে। তিনি সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। এটা আমার বিশাল পাওয়া ও তৃপ্তির।
জহিরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা আমার একটি সফলতা। অনেকের সহযোগিতায় যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর দেখা পেয়েছি, আমার বিশ্বাস উনার সহযোগিতায় সুচিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠব।
তিনি বলেন, গণভবনে প্রবেশের কিছুক্ষণ পরেই ডাক পরে আমার। এরপর ঠিক প্রধানমন্ত্রীর সামনে আমাকে একটি চেয়ারে বসানো হয়। সেখানে সমস্ত ডকুমেন্ট দেখে আমার কাছে রোগের বিষয়টি শুনতে চান তিনি। সব কথা বলার পর আপার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে একটি ছবি তোলার প্রস্তাব দিয়ে আমি উঠার চেষ্টা করলে, প্রধানমন্ত্রীই উঠে এসে আমার চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমার উঠার দরকার নেই। এরপর তিনি আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, তোমার পাশে আমি আছি ভয়ের কোনো কারণ নেই। তোমার সার্বিক দায়িত্ব আমার। এত বড় একজন মানুষকে পাশে পেয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
জহিরুল বলেন, এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
২৪ জানুয়ারি জাগোনিউজ২৪.কমে ‘টাকার প্রয়োজন নেই, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২ মিনিট কথা বলতে চাই’‘টাকার প্রয়োজন নেই, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২ মিনিট কথা বলতে চাই’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয় জহিরুল ইসলামকে নিয়ে। সংবাদটি প্রকাশের পর অনেকের দৃষ্টিতে পড়ে। এরপর জহিরুলের ডাক পড়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে।
প্রসঙ্গত, জহিরুল ইসলাম চিকিৎসা করতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে ৬ বার ভিসার জন্য আবেদন করেও পাননি। সব কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও কেন তিনি ভিসা পাচ্ছেন না এর কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।
তার রোগের বিশ্বের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব রোসেস্টার মেডিকেল সেন্টারের নিউরো মাসকুলার ডিজিজেস সেন্টারের ‘দ্য সেন্টার অব ফিল্ড ফ্যাসিও স্ক্যাপন্টো হিউম্যারাল মাসকুলার ডিসট্রোফি’ বিভাগ। সেখানে চিকিৎসা নেয়ার জন্য দুই বছর ধরে তিনি ছুটছেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে, কিন্তু প্রতিবার তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
জহিরুলের চিকিৎসার জন্য ভারতের কয়েকজন চিকিৎসক ও যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক ডা. রাবি তাওয়ালও যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে চিঠি পাঠান। তাতেও কোনো কাজ হয়নি জহিরুলের। এমনকি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সহযোগিতায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও জহিরুলকে ভিসা দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে দূতাবাসে চিঠি দেন। তারপরও ভিসা পাননি জহিরুল।
এখন হতাশ হয়ে অসুস্থ শরীর নিয়ে জহিরুল বিভিন্ন গণমাধ্যম অফিসে ছুটছেন তার অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরতে। তার বিশ্বাস এ সমস্যা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই সমাধান করতে পারবেন। তিনি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই মিনিট কথা বলার সুযোগ পেলেই তার দুই বছরের যন্ত্রণা তিনি ভুলে যাবেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। সেখানে তার চিকিৎসা হবে। তিনি আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন।
এমন প্রত্যাশা নিয়ে একদিন বিকেলে পথচারীদের সহযোগিতায় জাগো নিউজের কার্যালয়ে হাজির হন জহিরুল ইসলাম। দুজন পথচারী তাকে কোলে নিয়ে রাস্তা পার করে জাগো নিউজের অফিসে পৌঁছে দেন।
জহিরুল ‘ফ্যাসিও স্ক্যাপন্টো হিউম্যারাল মাসকুলার ডিসট্রোফি’ নামে একটি বিরল রোগে আক্রান্ত। এ রোগে প্রথমে রোগীর শরীর শুকাতে শুরু করে। পরে হাত-পা বেঁকে যায়। গিরায় গিরায় ব্যথা হয়। এরপর প্যারালাইসিস আক্রান্ত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে মৃত্যু হয় এসব রোগীর। বর্তমানে জহিরুলের শরীরও শুকাতে শুকাতে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে এখন হাড় ছাড়া আর কিছু নেই।
জহিরুল বলেন, কোনো জায়গায় বসলে উঠতে পারি না। রাতে ঘুমাতে গেলে সকালে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারি না। প্রতিটি কাজ করতে হয় অন্যের সহযোগিতা নিয়ে। মা-বাবা কেউ নেই। এক বোন ছিল বিয়ে হয়ে গেছে। শুনছি সেও আমার মত অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার মুগদায় খালার বাসায় থেকে জীবন কাটছে আমার। অনেক জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছি কোনো লাভ হয়নি। বাংলাদেশে তো রোগই শনাক্ত করতে পারেনি। ভারতের ব্যাঙ্গালুরে গিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানতে পারেন তার রোগের নাম।