সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক:: মহান রাব্বুল আলামীন হজরত আদম আ. কে সৃষ্টি করার পর নিঃসঙ্গতা দূর করা এবং মানব সৃষ্টির ক্রমধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে হজরত হাওয়া আ. কে সৃষ্টি করেছিলেন। কেননা, পুরুষ ও মহিলা একে অপরের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী, ‘তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ’ -(সুরা আল বাক্বারা ঃ ১৮৭)। নারী-পুরুষকে আল্লাহ তা’আলা পারষ্পরিক সম্প্রীতি ভালবাসার মাধ্যমে একাকার করে দিয়েছেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সীমাহীন মহব্বত সৃষ্টি করে প্রশান্তির নিদর্শনের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। যা আল্লাহ পাকের বাণীর মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গীনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারষ্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে’-(সুরা আর রূম ঃ ২১)। আর ঐ সব স্ত্রীদের কাছেই প্রশান্তি যারা স্বতী-সাধ্বী এবং আদর্শবান। হাদীস শরীফের ভাষায়, ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, সমগ্র পৃথিবীর মানুষের ভোগ্য বস্তু, এর এর মধ্যে সর্বোত্তম হলো পূণ্যবতী স্ত্রী’ -(নাসায়ী ঃ ৩২৩২)।
একজন আদর্শ স্ত্রীর যে সকল গুণাবলী তাকে সুশোভিত করে তোলে তার কতিপয় আলোকপাত করছি। প্রকাশ্য বা গোপনে সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ তা’আলা এবং তদীয় রাসুল রাহমাতাল্লিল আলামীন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ ও অনুকরণ করবেন। তাদের বিরুদ্ধাচরন কখনই করবেন না। তিনি নিজেকে স্বামীর অবর্তমানে সর্বাবস্থায় সংরক্ষণ ও সংবরণ করবেন। হাদীস শরীফের ভাষ্যমতে, ‘হজরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে মানুষের সর্বোত্তম সম্পদ সম্পর্কে অবহিত করবো না? তা হলো, নেককার স্ত্রী। সে তার দিকে তাকালে সে তাকে আনন্দ দেয় এবং তাকে কোন নির্দেশ দিলে সে তা মেনে নেয় এবং সে যখন তার থেকে অনুপস্থিত থাকে, তখন সে তার সতীত্ব ও তার সম্পদের হেফাজত করে’ -(আবু দাউদ ঃ ১৬৬৪)।
তিনি স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেখে বাড়ীর বাইরে বের হবেন না। তার আদেশ নির্দেশ মেনে চলবেন। তার প্রতি সর্বদা সম্মান ও ভালবাসা প্রদর্শন করবেন। কেননা, স্বামী তার কাছে সর্বদা সম্মানের পাত্র। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘হজরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি যদি কাউকে অন্য লোকের প্রতি সেজদা করার নির্দেশ দিতাম তাহলে অবশ্যই স্ত্রীকে তার স্বামীর প্রতি সেজদা করার নির্দেশ দিতাম’ -(তিরমিজি ঃ ১১৫৯, ইবনে মাজাহ ঃ ১৮৫৩)। স্বামী স্ত্রীকে সর্বাবস্থায় মুচকি হাসিতে দেখতে পছন্দ করেন। সেজন্য, স্ত্রীর উচিৎ হাস্বোজ্জল করে থাকা। ঘোমরা মুখ না করে মুচকি হেসে স্বামীকে বরণ করার মাধ্যমে আদর্শ স্ত্রীর আদর্শতা প্রকাশ পায়। মহান আল্লাহ পাকের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পাশাপাশি তিনি স্বামীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কারীনী হবেন।
স্ত্রী উত্তম চরিত্রের অধিকারীনী হবেন। ঝগড়া-বিবাদের সময় কখনও স্বামীর আওয়াজের উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা আদর্শ স্ত্রীর বিশেষ গুণ। স্বামী দরিদ্র হলেও তাঁর দরিদ্রতার উপর ধৈর্য্য ধারণ করা এবং সম্পদশালী হলে তার সম্পদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। সর্বদা স্বামীর কল্যাণে প্রচেষ্ঠা ও কল্যাণকে পছন্দ করা এবং স্বামীর কল্যাণকে প্রকাশের প্রচেষ্ঠা করা। সত্য কথা বলার মাধ্যমে নিজেকে সুশোভিত করা এবং সর্বপর্যায়ে মিথ্যা বলা বা মিথ্যার উপর আশ্রয় নেয়া হতে বিরত থাকা আদর্শ রমণীর সর্বোত্তম গুণ। অন্যকে তিরষ্কার এবং ঠাট্রা, বিদ্রুপ থেকে সর্বদা বিরত থাকা। আদর্শ স্ত্রী হবেন নম্র, ভদ্র। অহংকার, গর্ব ও অহমিকা হতে সবসময় নিজেকে দূরে রাখবেন। আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত করা ফরজসমূহ পূর্ণাঙ্গরুপে আদায় করবেন। আদর্শ স্ত্রীর জেনে রাখা উচিৎ যে, তার স্বামী তার সর্দার বা নেতা, যিনি তাকে পরিচালনা করবেন। আদর্শ স্ত্রীর আরো জেনে রাখা উচিৎ যে, স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার ও কর্তব্য প্রচুর এবং মহৎ কিন্তু এটাও জানা উচিৎ তার চেয়ে বেশি অধিকার ও কর্তব্য স্ত্রীর স্বামীর এবং সেগুলো সুমহান। তিনি কখনো নিজের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য আহ্বান করলে সাথে সাথে সাড়া দেয়া একজন আদর্শ রমণীর উত্তম গুণাবলীর অন্যতম। এ সম্পর্কে নির্দেশনা হলো যে, ‘হজরত ত্বলক ইবনে আলী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, কোন লোক তার স্ত্রীকে নিজ প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে ডাকলে সে যেন সাথে সাথে তার নিকট আসে, এমনকি সে চুলার উপর রান্না-বান্নার কাজে ব্যস্ত থাকলেও’ -(তিরমিজি ঃ ১১৬০, মিশকাতুল মাসাবীহ ঃ ১২০২)। অন্যথায় এ ব্যাপারে সতর্কবাণী প্রদান করা হয়েছে। অন্য হাদীসে এসেছে, ‘হজরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, কসম সেই সত্ত্বার যাঁর হাতে আমার প্রাণ। কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে যখন বিছানায় আহ্বান করে, কিন্তু সে তা অস্বীকার করে, নিঃসন্দেহে যে পর্যন্ত সে তার স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট না হয়, ততক্ষণ আসমানবাসী তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন’ -(মুসলীম ঃ ৩৪৩২)। তাই আদর্শ স্ত্রীগণ এ ব্যাপারে যত্বামন থাকবেন।
একই ভুল বারংবার না করা, ভুল করে ফেললে শুধরে নেয়া এবং সে ভুল যাতে সংঘটিত না হয় সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকা একজন উত্তম স্ত্রীর অন্যতম গুণাবলীর একটি। তিনি হবেন আল্লাহ পাকের যিকির কারীণী। সর্বদা তার জিহ্বা আল্লাহর যিকিরে মশগুল রাখবেন। স্ত্রী হবেন পুতঃপবিত্র, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। পোষাক-পরিচ্ছেদ এবং শারিরীকভাবে তা প্রকাশ পাবে। আল্লাহর বাণী, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁেচ থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন’ – (সুরা আল বাক্বারা ঃ ২২২)।
আদর্শ স্ত্রীগণ স্বামীর সকল আদেশের অনুগতশীল হবেন। তবে যদি কোন পাপ কাজের অথবা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল পাকের বিরূদ্ধাচরণ কিছু হয় তা হবে অগ্রহণযোগ্য। যা মানা যাবে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘কোন সৃষ্টির অনুগত হতে গিয়ে আল্লাহর অবাধ্য কোন কাজ করা যাবে না’।
স্ত্রী স্বামীকে কিছু দান করলে বা খেদমতের কারণে তাকে খোঁটা দিবেন না। স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোজা আদায় করবেন না। মুহরীম ছাড়া অন্য কাউকে স্বামীর অনুমতি ছাড়া তার বাড়ীতে বা রূমে প্রবেশ করতে না দেয়া আদর্শ স্ত্রীগণের বিশেষ গুণ। তিনি হবেন লজ্জাশীল। স্বামীকে কখনও কোনভাবে কষ্ঠ দিবেন না। স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেখে তার সম্পদের কোনকিছু কোথাও ব্যয় করবেন না। তবে, আল্লাহর পথে দান করলে উভয়েই সাওয়াবের অধিকারী হবেন। হাদীস শরীফের ভাষ্যমতে, ‘হজরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, কোন স্ত্রী যদি তার ঘর হতে বিপর্যয় সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া খাদ্যদ্রব্য সাদকা করে তবে এ জন্যে সে সাওয়াব লাভ করবে। আর উপার্জন করার কারণে স্বামীও সাওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চীও অনুরূপ সাওয়াব পাবে। তাদের একজনের কারণে অন্যজনের কোন কমতি হবে না’ -(বোখারী ঃ ১৪২৫)। আদর্শ স্ত্রীর গুণের অন্যতম একটি হলো স্বামীর পাশে অন্য কোন অপরিচিত গায়রে মুহরীম লোকের প্রশংসা করবেন না, তবে ঐ ব্যক্তির ধর্মীয় ভালগুলোর প্রশংসা করতে পারবেন।
সর্বোপরি, আদর্শ স্ত্রীগণ স্বামীকে সন্তুষ্ট ও খুশি রাখবেন। আর এর মাধ্যমেই জান্নাত লাভের পথ সুগম করবেন। হাদীস শরীফের ভাষায়, ‘হজরত উম্মে সালমাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, স্ত্রীর প্রতি তার স্বামী সন্তুষ্ট ও খুশি থাকা অবস্থায় কোন স্ত্রীলোক মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ -(তিরমিজি, রিয়াদুস সালেহীন ঃ ২৯২)।