মাতৃভাষার দাবী প্রথম শুরু হয় সিলেটে থেকে, ভাষা সৈনিকদের সাক্ষাৎকার গ্রহন করেছেন সিলেট৭১নিউজের উপদেষ্টা সাংবাদিক জিল্লুর রহমান।
সারা দেশে ভাষার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় ১৯৪৮ সালে। কিন্তু সিলেটের মানুষ ১৯৪৭ সাল থেকেই বাংলা ভাষার দাবী করেন। বিগত কয়েক বছর থেকে ভাষা সৈনিকদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন জিল্লুর রহমান, ভাষা সৈনিকদের তথ্য মতে মাতৃভাষার দাবী প্রথম শুরু হয় সিলেটে। এডভোকেট মনির উদ্দীন, প্রফেসর আব্দুল আজিজ, ডাঃ আব্দুর রহিম, নুরুল ইসলাম এছাড়াও মরহুম ড.সদর উদ্দীন, মরহুম অধ্যাপক আবুল বশর, মরহুম ডাঃ আব্দুর রকিব সহ অনেক ভাষা সৈনিকের সাথে জিল্লুর রহমানের নেয়া সাক্ষাৎকারে জানা যায়, ১৯৪৭ সালের ৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত আসরের মূল বিষয় ছিল রাষ্ট্রভাষা।সাহিত্যিক মুসলিম চৌধুরী ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। এছাড়া ৩০ নভেম্বর সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা হলে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিষয় ছিল পূর্ব পাকিস্তানের ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু হওয়া উচিত’।
‘৪৮ সালের ৮ মার্চ স্থানীয় গোবিন্দ চরন পার্কে (বর্তমানে হাসান মার্কেট) এক জনসভা আহ্বান করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মাহমুদ আলী। সভা শুরুর কিছুক্ষনের মধ্যে বাংলা ভাষা বিরোধীরা লাটি সহ ইট পাটকেল দিয়ে হামলা চালায়। এতে মাহমুদ আলী, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, মকসুদ আহমদ সহ আরো অনেকেই আহত হন।
এর প্রতিবাদে ১০ মার্চ গোবিন্দ পার্কে সভা আহ্বান করলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ১৪৪ ধারা জারি করেন। এছাড়াও আরো কয়েকটি সভা গোবিন্দ চরন পার্কে হয়েছে এতে এডভোকেট মনির উদ্দীন সাহেবও সভাপতিত্ব করেছেন। জিন্দাবাজারে সাপ্তাহিক নওবেলাল অফিসে বাংলা ভাষার পক্ষের কর্মীদের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হত।
১৯৫২ সালে মুসলিম সাহিত্য সংসদের নেতৃবৃন্দের নির্দেশে অনুযায়ী স্কুল কলেজের ছাত্ররা পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন তৈরী করতেন। এদের মধ্যে অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালন করেন দেওয়ান নূরুল হোসেন চঞ্চল, আব্দুস শহীদ খান, বাহাউদ্দিন জাকারিয়া। সিলেট এমসি কলেজে ভাষার দাবীতে সভা সমাবেশ কালো বেচ ধারন সহ বিভিন্ন ভাবে আন্দোলন করেছেন ড. সদর উদ্দীন, অধ্যাপক আবুল বশর সহ অসংখ্য ছাত্ররা। সিলেটের গোলাপ গন্জের বাসিন্দা ডাঃ আব্দুর রহিম তখনকার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের সেক্রেটারীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি সহ আরো অনেক সিলেটি রাস্ট্র ভাষার দাবীতে ঢাকার আন্দোলনে জড়িত ছিলেন।
২১ ফেব্রওয়ারী রাজধানীর রাজপথে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেছে। এ খবর সিলেটে পৌছা মাত্র সিলেট মিছিলে মিছিলে মুখরিত ছিল। প্রচন্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। ২২ ফেব্র“য়ারী ভোর থেকেই সারা দেশের মতো, সিলেট ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। সকাল থেকেই ছাত্র জনতা মিছিল করে শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করতে থাকে। সকাল ১০টায় সিলেট রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সদস্যরা এক জরুরী সভায় মিলিত হন।
ভাষা সৈনিকদের তথ্য মতে সিলেট ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় জড়িত ছিলেন সা’দত খা, পীর হবিবুর রহমান, আসাদ্দর আলী, এজেড আব্দুল, নুরুর রহমান, হাজেরা মাহমুদ, আব্দুর রহীম, মতচ্ছির আলী, এডভোকেট মুুনির উদ্দিন, সৈয়দ মোতাহির আলী, আব্দুল হামিদ, জোবেদা রহিম চৌধুরী, শাহেরা বানু চৌধুরী, লুৎফুন্নেসা খাতুন, আব্দুস সামাদ, আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সৈয়দ সুহরাব বখত, উবেদ জায়গীরদার, নজির উদ্দিন আহমদ, আবুল বশর, ড. সদর উদ্দীন, আব্দুল আজিজ, সোনাহর আলী, ইসহাক মিয়া, সৈয়দ আকমল হোসেন, আব্দুল মজিদ, দেওয়ান ফরিদ গাজী, কমরেড তারা মিয়া, সফাত আহমদ চৌধুরী, মুহিবুর রহমান, নুরুল ইসলাম, কবির চৌধুরী, বরুণ রায়, অনিমেশ ভট্টাচার্য্য প্রমুখ