মোঃ তাজ উদ্দিন ::দেশে মানুষ বাড়ার সাথে সাথে যুবসমাজের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান না থাকায় দিন দিন বেকারত্বের হার বাড়ছে আর মানুষের শ্রেণীর পরিবর্তন হচ্ছে। যুব সমাজের শিক্ষার মান অনুযায়ী চাকুরী না পাওয়ায় তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এসব যুব সমাজকে যোগ্যতানুযায়ী সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদ পুরণ করে বেকারত্ব দূরীকরণ করা যেতে পারে। অন্যদিকে দেশের ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ জেলায় জেলায় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে শিক্ষিত ও মেধাবী যুব সমাজকে কাজে লাগানো যেতে পারে। আর এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ইন্ডাস্ট্রিজ মালিকগনের প্রতি সরকারও আন্তরিক হতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিজ মালিকদের মালামালকৃত গাড়ী চিহ্নিত করে রাজধানী সহ শিল্প বন্দরের সাথে যাতায়াত খচর কমাতে হবে। কারণ হলো, দেশের প্রায় রাস্তা বড় অথবা ডিবাইডার না থাকায় যাতায়াত খরচ ব্যয়বহুল হওয়া দেশের সবকটি জেলাতে ইন্ডাস্ট্রিজ নামক কল-কারখানা নির্মাণ করতে ব্যবসায়ীগণ নারাজ। তাই যুব সমাজের চাকুরীর সুবিধার্থে ও উন্নত দেশ গড়ার স্বার্থে দেশে আমদানি কমিয়ে রপ্তানী বাড়ীয়ে জেলায় জেলায় ইন্ডাস্ট্রিজ গড়ে তোলে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত বেকার যুব সমাজকে চাকুরী করার সুযোগ দেওয়া জরুরী।
ইদানীং দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে মেধাবী যুব সমাজ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি চাকুরী করার সুযোগে দেশ ছেড়ে বাহির মূখি হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। যার ফলে মেধা শুন্য হয়ে যাচ্ছে সমাজ এবং রাষ্ট্র। এসব বাহির মুখি শিক্ষিত যুবকদের মূখে একটিই বাণী দেশে চাকুরী নাই। দেশের উন্নয়নশীল শিল্প প্রতিষ্ঠানে যুব সমাজ চাকুরী পেলেও শ্রমিক ছাটাই অব্যাহত থাকায় যুবসমাজের বেকারত্বের হার বাড়ছে, অন্য দিকে উন্নয়ন থেকে দূরে থাকছে দেশ। কোন কোন যুব সমাজ বেকারত্বের যন্ত্রনা মাথায় নিয়ে অনেকেই যৌবনকালও হারিয়ে ফেলেছে। এসব মেধাবী যুব সমাজকে দেশের মাটিতে চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টি করে দেশকে মেধাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব। বিগত ২৬.১১.২০১৮ ইং তারিখে দেশের একটি প্রাইভেট টিভি চ্যানেল (মাইটিভি) এর মাধ্যমে প্রকাশ করে যে, দেশের শিক্ষিত যুব সমাজ প্রতি বছর ১ লক্ষ ছাত্রের মধ্যে ৩৯ জন ছাত্র বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যার পথ বেচে নিচ্ছে। এসব শিক্ষিত যুবসমাজের প্রতি লক্ষ্য রেখে জেলায় জেলায় ইন্ডাস্ট্রিজ নামের কল-কারখানা গড়ে তোলা প্রয়োজন। পাশাপাশী দেশে কৃষিখাতকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি মূল্যহ্রাসে বিক্রয় করে বেকারত্ব কমানো সম্ভব হতে পারে। না হয় বেকার যুব সমাজ টাকা আয়-রোজগারে ব্যর্থ হলে দেশের অমঙ্গল হবে। পাশাপাশি সরকারই ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে দেশে চাকুরী ব্যবসা শুরু হয়েছে। অসাধু জনগোষ্ঠী শিক্ষিত থেকে স্ব-শিক্ষিত যুবসমাজ দেশের মাটিতে চাকুরী নিতে লক্ষ লক্ষ টাকার চুক্তি করতে হয়। এসব এর মধ্যে মেধাবিহীন ও ধনাঢ্যবানদের ছেলে-মেয়ে চাকুরী পেলেও দেশের মেধাবী যুব সমাজ টাকার অভাবে চাকুরী থেকে বঞ্চিত থাকে। আর যারা উৎকোচ এর বিনিময়ে চাকুরীতে যোগদান করে এক সময় ঐ টাকা জনগনের পকেট থেকে আদায় করে নিতে বাধ্য হবে। যার ফলে দুর্নীতিগ্রস্থ হবে সমাজ ও রাষ্ট্র। এসব বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে নিয়ে অনলাইন ভিত্তিক চাকুরী নিয়মিত করণ করে অসাধু চাকুরীর ব্যবসায়ী জনগোষ্ঠীর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে দেশ। আর মেধাবি যুব সমাজকে উৎকোচ বিহীন চাকুরী পাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। না হয় দেশ থেকে মেধাবী যুব সমাজ এক সময় হারিয়ে যাবে বলে মনে হয়। দেশে বেকারের তালিকায় পড়ে থাকা অনেকেই অভাবের তাড়নায় ভাল-মন্দ না বুজে, না খুজে অথবা সমপোযোগী কর্মের দিকে লক্ষ্য না করে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। দেশে শিক্ষার হার বাড়লেও চুরি-ডাকাতি ছিনতাই সহ নানা অপকর্ম আধুনিক যন্ত্রপাতির দ্বারা ঘটিত হচ্ছে। পূর্বেকার দিনে চোরেরা ঘর চুরি করতে গেলে মাটি গর্ত করে ঘরে প্রবেশ করত। ইদানীং তা আর নয়, চোরেরা ঘর চুরি করতে বিভিন্ন প্রকার আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে। লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো যে, দেশে উচ্চ শিক্ষিত থেকে শুরু করে স্ব-শিক্ষিত যুবসমাজ বেশীরভাগ কর্মহীন। দেশের যুবসমাজের পিতা-মাতা সন্তানকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলতে দেশের মাটিতে অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। আর এসব সন্তানাদি দেশের মাটিতে চাকুরী নিতে বড় অংকের টাকা কিভাবে খরচ করবে। তাই মন্ত্রনালয়ের অধীনে অনলাইন ভিত্তিক নিয়োগ চালু করা জরুরী।
আর আমাদের দেশে যে সব পিতা-মাতা সন্তানাদিকে বিদেশ মূখি করার চিন্তা করছেন, তারা দেশের প্রতি আন্তরিক হয়ে উন্নয়নশীল কর্মসংস্থান গড়ে তুলে দেশের মাটিতে বিনিয়োগ করে দেশ উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে। উঠন্ত বয়সী যুবসমাজ সময়মত সাংসারিক জীবন গঠনের লক্ষ্যে টাকা উপার্জন করতে হিমসিম খেতে দেখা যাচ্ছে। শৈশব দিনে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র না থাকলেও বেকারত্বের হার ছিল কম, যুবসমাজ পড়া লেখা শেষ করে চাকুরী না পেলেও পিতা বা মামার স্থলাভিষিক্ত হয়ে কর্মজীবনে জড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময় একটি প্রথাও ছিল। মামা-ভাগনা যেখানে আপদ নাই সেখানে, বর্তমান সময়ে বেকারত্বের হার বাড়তে থাকায় মামার সংসারে টানাপুড়নে ভাগিনার খোজ-খবর রাখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর দেশ হতে মানবিক দিনগুলি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। দেশের যুবসমাজ টাকা আয়-রোজগারে উপায় খোজতে এখন আর কেউ কারও খবর রাখেনা, সবই ব্যস্ত, হঠাৎ-হঠাৎ মোবাইল, ইমু, ওয়াটস্এপ দ্বারা কথা চলে, এসব একাকার প্রথা ভারত সহ ইউরোপের কিছু দেশে চালু রয়েছে। বর্তমানে এসব একাকার প্রথা বেকারত্বের কারণে দেশেও ঢুকে পড়েছে বলে মনে হয়। ইদানীং বেকারত্ব আর সাংসারিক টানাপোড়নের মাত্রা বাড়তে থাকায় নতুন সংসার বিবাহের পর থেকে মাতা-পিতা, ভাই-বোন হতে পৃথক! থাকতে দেখা যাচ্ছে। আর এই অমানবিক কার্যক্রম থেকে শুরু হয় সাংসারিক ফিতনা। স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে নিয়মিত বিবাদ বেড়ে যাওয়ার কারনও রয়েছে, আর এসব গোপনীয় অভাব “কাল” হয়ে দাড়ায়, নারী, শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা। যার ফলে দেশের যুবসমাজের অস্তিত্ব ধ্বংষের পথে চলে যাওয়ার কারনও রয়েছে। বর্তমান সময়ে যুব সমাজের মান উন্নয়নের স্বার্থে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষন কেন্দ্র চালু থাকলেও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত যুব সমাজ প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মহীন হয়ে ঘরের মানুষ ঘরেই থাকতে হচ্ছে। যুব সমাজের পিতা-মাতা অত্যন্ত পরিশ্রম করে পড়া-লেখা করালেও শিক্ষিত হয়ে চাকুরী কিংবা ব্যবসা করে সাংসারিক জীবন গঠন করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
দেশের শিক্ষিত যুবসমাজ চাকুরী কিংবা ব্যবসার উপায়ান্তর না পাইয়া অনলাইন’র শেয়ার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়লে এই শেয়ার ব্যবসা তাদের জন্য কাল হয়ে দাড়ায়। শেয়ারের টাকা কেউবা পিতা-মাতা হতে, কেউবা জমি বিক্রি করে, কেউবা স্বর্ণ বিক্রি করে বিনিয়োগ করেছিল। প্রথমার্ধে ভাল ফলাফল হলেও পরবর্তীতে জমাকৃত ধানের নিচে ইদুরের আক্রমণের মত শেয়ার ব্যবসা লুন্ঠিত হয়। যার ফলে দেশ থেকে কত যে তাজা প্রাণ চলে গেল তা লিখে বলা সম্ভব নয়। শেয়ার ব্যবসায়ী হার্ট স্ট্রোক করে পঙ্গু, কেউবা মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছে। এসব বিষয়ে সরকারের নজরে নিয়ে শিক্ষিত যুবসামাজকে কাজে লাগাতে জেলা জেলায় যোগাযোগী ব্যবস্থা উন্নত করে ইন্ডাস্ট্রিজ নামক কল কারখানা নির্মাণ করা জরুরী। বৃটিশ শাসনামলে শিক্ষিত লোকের মূল্য ছিল বেশী বিধায় ইংরেজরা অক্ষরজ্ঞানী লোকজনকে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রেখে ছিল। আজ শিক্ষিত যুবসমাজ বেকারত্বের হাত মাথায় রেখে অসহায় অবস্থায় জীবন-যাপন করছে। এসব সহজ-সরল যুবসমাজকে দেশের মাটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধা গড়ে তুলে দেশকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব।