নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট-৩ আসনের বিএনপি থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারে ঋণখেলাপি শফি চৌধুরী। তার কারণ হিসেবে রয়েছে- ঢাকার তেজগাঁও শাখার পূবালী ব্যাংককে এলাবার্ট ডেবিড বাংলাদেশ লি: নামে খেলাফি হয়েছেন তিনি। অর্থঋণ আদালতে মামলা নং ৪৫/০৩।
এছাড়া সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরী গত বুধবার মনোনয়নের শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিশাল শোডাউন দিয়ে ও ধানের শীষ মার্কা হাতে নিয়ে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নমিনেশন প্রদান করেন।
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযাযী, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোন শোডাউন বা মিছিল করা যাবেনা। এসময় পাঁচ থেকে সাতজনের বেশী সঙ্গে নেয়া যাবেনা বলেও নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে।
কিন্তু শফি চৌধুরী শোডাউন নিয়ে শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থকের উপস্থিতিতে মনোনয়ন জমা দেন। যা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন করেছেন তিনি।
অনেক আগে থেকে শফি চৌধুরী এলাকায় সমালোচিত হয়ে আসছেন। শফি আহমদ চৌধুরীর ঋণ খেলাপি মামলা চলমান। ঢাকার তেজগাঁও শাখার পূবালী ব্যাংককে এলাবার্ট ডেবিড বাংলাদেশ লি: নামে খেলাফি হয়েছেন শফি চৌধুরী। অর্থঋণ আদালতে মামলা নং ৪৫/০৩। টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যাংক। আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে স্থগিতাদেশ প্রার্থনা করেন তিনি। আপিল মামলা কোট নং ১০ এর শুনানি সিলেটের কৃতিসন্তান বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও কাজী মো: ইজারুল আকন্দের আদালতে আজ। কিন্তু আদালত ১ (এক) সপ্তাহ পর শুনানির দিন ধার্য করেছেন (হাইকোটের মামলা নং ৩৩৭/১৭ইং, শুনানির ক্রমিক নং ৩৩)। শফি আহমদ চৌধুরী ঋণ খেলাফি অবস্থায় ১৯৮৬ সাল থেকে প্রতি নির্বাচনের পূর্বে ঋণ খেলাফি আদেশের উপর স্থগিতাদেশ নিয়ে নির্বাচন করে থাকেন। এবারও সেই চেষ্টা করছেন। কোন অবস্থায় স্থগিতাদেশে ব্যর্থ হলে তার মনোনয়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিবে দলে। এছাড়া বিগত ওয়ান ইলেভেন সরকারকালীন তার গ্রামের বাড়ির পুকুর থেকে ত্রাণের টিন ও প্রোটিন বিস্কুট উদ্ধার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ইমেজ সংকটে পড়েন তিনি। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের জন্য বিষয়টি বিরোধিতার খোরাকে পরিণত হয়। রাজনীতির জীবনে তিনি ৬ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেন। ১৯৮৬ সালে রিক্সা প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে, পরবর্তীতে বিএনপিতে যোগদান করলে ১৯৯১, ১৯৯৬ (২ বার), ২০০১, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ২০০১ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি জয়লাভ করেছিলেন। তিনি ১/১১ এর স্বৈরশাসক ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনকে কিছুদিন পূর্বে তার আমেরিকার বাসায় নিয়ে দাওয়াত খাওয়ান। বিগতদিনে টকশোতে তিনি গর্বের সাথে বলেছিলেন, দুনীতি মামলায় ১/১১ এর সময় খালেদা-তারেক জিয়া সহ অনেক নেতারাই জেল কাটলেও আমি জেল কাটেনি, নির্দোষ খালাস পেয়ে একদিনে মামলা শেষ করে বের হয়েছি। তার এসব কথায় দলের ইমেজ নষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন দলের নেতাকর্মীরা। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের মূল হোতা হিসেবে তাকে আখ্যায়িত করেন দেশবাসী। তার কারনেই লক্ষ লক্ষ মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে অনাহারে মারা যান। এমনকি তার বাসা ও ঢাকা মতিঝিলের অফিসে হামলা, ভাংচুর চালিয়ে অফিস জালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় তার দেশে আসা নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে তৎকালীন সরকারকে তার ভাইয়ের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষের ত্রান আত্মসাতের কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেশে আসেন। আর এসব কারনেই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম সমালোচিত রয়েছেন তিনি। এখন নতুন করে বিষয়গুলো উঠে আসছে ভোটের মাঠে।
দলের দায়িত্বশীল ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, দলের এই কঠিন দুঃসময়ে যদি শফি চৌধুরীর মতো সমালোচিত ব্যক্তিকে টাকা বাণিজ্যের মাধ্যমে মনোনয়ন দেয়া হয়। তাহলে দলের প্রতি আস্থা আর বিশ্বাস কমে যাবে নেতাকর্মীদের।