সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক: আট থেকে দশজনের একটি দল। তাদের নেতৃত্বে একজন সহকারী কমিশনার (এসি)। রয়েছে পরিদর্শক, উপপরিদর্শক, কনস্টেবল ও নিজস্ব সোর্স (তথ্যদাতা)। শরীরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জ্যাকেট। হাতে ওয়্যারলেস, পিস্তল ও হ্যান্ডকাফ। যেন সত্যিকার ডিবি পুলিশের একটি টিম। তারা অভিযান চালায় নিয়মিত। আর তাদের এসব অভিযানের টার্গেট ব্যবসায়ীর সর্বস্ব লুট করা। সিনেমায় যেভাবে দলবেঁধে ত্রাস সৃষ্টি করে লুট করা হয়, তা দেখে অনুপ্রাণিত এই দল। ডিবি পরিচয়ে ব্যবসায়ীদের আটক করে ডাকাতি করছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। এই চক্রের সক্রিয় আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করে তথ্যগুলো জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- ডিবির এসি পরিচয়দানকারী দলনেতা এ কে এম রানা (৩০), পরিদর্শক পরিচয়দানকারী জাবেদ আহমেদ ওরফে বাবু (৩৭) ও সোহাগ খন্দকার (৩১), উপপরিদর্শক পরিচয়দানকারী নাজমুল হোসেন (২৪) ও দেলোয়ার হোসেন (৫০), কনস্টেবল পরিচয়দানকারী আসাদুজ্জামান (৩৫), বুলবুল আহমেদ (৩২), হারুন ওরফে হিরা (৩২)।
পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পুরান ঢাকায় ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি মোটরসাইকেল, তিনটি ওয়্যারলেস সেট, এক জোড়া হ্যান্ডকাফ, দুটি খেলনা পিস্তল, একটি চাপাতি ও একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে পিআইবি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিটের প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, গত ২৫ অক্টোবর মোস্তাফিজুর রহমান ও তাঁর বন্ধু পলাশ পল্টন থেকে সুপ্রভাত বাসে ওঠেন। বাসটি নর্দা আসার পর দুটি মোটরসাইকেল ব্যারিকেড দিয়ে বাসটি থামায়। এরপর হাতে ওয়্যারলেস ও শরীরে ডিবির জ্যাকেট পরা কজন বাসে উঠে মোস্তাফিজুর ও পলাশকে বাস থেকে নামায়। ইয়াবা আছে বলে তাঁদের কাছে থাকা ৫৭ হাজার টাকা ও তিনটি মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নেয় চক্রটি। এ সময় বাসে দুজন পুলিশ কনস্টেবল কথা বলার চেষ্টা করলে গ্রেপ্তারকৃতরা তাদের ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।
বনজ কুমার আরো বলেন, পরে পলাশকে ছেড়ে দিয়ে মোস্তাফিজুরকে থানায় নেওয়ার কথা বলে হাতিরঝিল এলাকায় নেওয়া হয়। সেখানে মোটরসাইকেল থামিয়ে মোস্তাফিজুরের কাছে থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। ওই ব্যাগে ১৩ লাখ টাকা থাকায় মোস্তাফিজুর তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেন। একপর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন এরা ভুয়া পুলিশ সদস্য। পরে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে চক্রটি পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করলে তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। তদন্তে দেখা যায়, এটি একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতচক্র। পরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের টিম লিডার এসি পরিচয়দানকারী রানা। বংশাল ও মালিবাগে তার বাড়ি থাকার পরও ‘বস’ নামে একটি সিনেমা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এই কাজ শুরু করে। টিমের অন্যদের মধ্যে বাবু ও সোহাগ নিজেদের ইন্সপেক্টর, নাজমুল সাব-ইন্সপেক্টর ও অন্য তিনজন কনস্টেবল পরিচয় দিত। যাদের মধ্যে হিরা ও বাবু একাধিক মামলার চিহ্নিত আসামি।
ডিআইজি বলেন, চক্রটি মূলত তাদের নিয়োজিত সোর্সের মাধ্যমে তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, ইসলামপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের বড় অঙ্কের নগদ টাকার লেনদেন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এ ধরনের কাজ করত। কাজ সফল হলে সোর্স পেত ৪০ শতাংশ। এ চক্রটির মোট ১১ জন সদস্য। দুজন এখনো পলাতক রয়েছে। আর একজন আগেই গ্রেপ্তার হয়েছে। এ ধরনের আরো সাতটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।