ইসমাইল হুসেন:সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে দুই জোটের একাধিক শরীক দলের টার্গেট থাকায় বিষয়টি নিয়ে ভাবছে দুই জোটেরই কেন্দ্র। শরীকদের ছাড় দেবে, নাকি নিজ দলের কাউকে মনোয়ন দেওয়া হবে এই আসনে- এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি। ফলে নির্বাচনের প্রায় আর দুই মাস বাকি থাকলেও এ আসনে এখনো গ্রীণ সিগন্যাল পাননি কেউ। সূত্রমতে, রাজনীতির নানা হিসেব-নিকেশের পর এই আসনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হবে।
ডিসেম্বর ২৭ তারিখকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ধরেই এগুচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধিন মহাজোটে এবং বিএনপি নেতৃত্বাধিন ২০ দলীয় জোটে শুরু হয়েছে নানা হিসেব-নিকেশ। আওয়ামী লীগ ধরেই নিয়েছে বিএনপি ও এর শরীক দলগুলো আসছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। সে হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধিন জোটে চলছে নির্বাচনের প্রস্তুতি। অন্যদিকে, বিএনপি ও শরীক দলগুলোর মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে ভেতরে ভেতরে শুরু হয়ে দেন-দরবার। অঘোষিতভাবে দরকষাকষিও চলছে। সিলেট-৫ আসন দুই জোটের আট দলের টার্গেটে রয়েছে।
ফলে এ আসন নিয়ে দুই জোট ও তাদের নেতা-কর্মীদের মাঝে শুরু হয়েছে নানা হিসেব-নিকেশ। এই আসনে কে পাশ করবে- এই মুহুর্তে এটা বড় প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, কোন জোট থেকে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন। কারণ দুই জোটের বিভিন্ন শরীক দল এ আসনে প্রার্থী দিতে অনঢ়। ইতোমধ্যে তারা প্রার্থী তালিকাও তৈরী করেছে। তালিকার বাইরেও অনেকে মাঠে সক্রিয়। ফলে এক ডজনেরও বেশি সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম আলাচনায় রয়েছে। এই প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বেশি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধিন জোট থেকে কমপক্ষে তিনটি দল এখানে প্রার্থী দিতে চায়। আর বিএনপি নেতৃত্বাধিন জোটে পাঁচটি দল আসনটি দাবী করছে।
মহাজোট থেকে এখানে আবারো প্রার্থী হতে চান বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির মো: সেলিম উদ্দীন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাব্বীর আহমদ ও কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল মতিন চৌধুরীও এখান থেকে প্রার্থী হতে চান। জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করছেন, বিগত নির্বাচনে যেহেতু মহাজোট থেকে এটা জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, এবারও আওয়ামী লীগ এই আসন ছাড় দেবে। এছাড়া আনজুমানে আল ইসলাহর নেতা মাওলানা হুসাম উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলীও মহাজোটের প্রার্থী হতে চান। ২০০৭ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনে তিনি এখানে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী ছিলেন। গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এবং ২০০৭ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনে ফুলতলী পীরের দলকে আসনটি ছেড়ে দিলেও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা এবার এখানে শরীক কাউকে ছাড় দিতে চান না। তারা মনে করেন, গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি বা তার আগে হুসাম উদ্দিনের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল নানা কারণে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড এবার এই আসন অন্য কাউকে দেবেনা। এখান থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আহমেদ আল কবির, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ফয়জুল মুনিম চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট মাসুক উদ্দিন আহমদ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আব্দুল মোমিন চৌধুরী।
অন্যদিকে, ২০ দলীয় জোট থেকে কমপক্ষে পাঁচটি দল এ আসন চায়। বিএনপি নেতৃত্বাধিন জোট থেকে এখানে ২০০১ সালে এমপি নির্বাচিত হন জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি এ জোটের প্রার্থী ছিলেন। জামায়াত মনে করছে, এ আসনটি তারা আবারো পাবে। অন্যদিকে, বিএনপির কয়েক জন এ আসনে জোটের প্রার্থী হতে চান। তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান কানাইঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক উদ্দীন চৌধুরী, সাবেক এমপি আবুল কাহের চৌধুরী ও বিএনপি নেতা মামুনুর রশীদ মামুন। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এবার এ আসনটি বিএনপিই পাবে। অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক বাংলাদেশ ন্যাপ দলটির যুগ্ম মহাসচিব এহসানুল হক জসীমকে সিলেট-৫ আসনের জন্য তালিকাভূক্ত করেছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা উবাইদুল্লাহ ফারুকও এখানে ২০ দলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী হতে চান। এ ছাড়া এ জোটের আরেক শরীক খেলাফত মজলিসও এখানে তাদের প্রাথী দিতে চায় ছাত্র মজলিসের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন সাদীকে।
ভাঙা-গড়ার খেলায় এসব জোট থেকে একাধিক প্রার্থী হলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না। কোন জোট থেকে কে প্রার্থী হচ্ছেন এটা এই মুহুর্তে কেউ বলতে পারছে না। কারণ, বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে মিমাংসিত হবে। ৩০০ আসন ভাগাভাগির হিসেব-নিকেশ অনুযায়ী এ আসন থেকে কোন জোটের কে মনোনয়ন পাবে- সেটা স্পষ্ট হবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর।