মোঃ তাজ উদ্দিন:যারা হাঁসতে জানে তারা ভালবাসতে ও জানে। শিশু কিশোর হাঁসলে দেশও হাঁসবে। হাজার বছর ধরে শিশু কিশোর শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে প্রতিযোগীতামূলকভাবে খেলাধুলা উপভোগ করে যাচ্ছে।
উন্নত দেশ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে শিশু-কিশোর ও যুবসমাজ কে লেখাপড়ার পাশাপাশী খেলাধুলা করার উপযুক্ত মাঠ (ওহফড়ড়ৎ) নির্মাণে সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে আসা জরুরী। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে খেলার মাঠ (ওহফড়ড়ৎ) নির্মিত হলে গ্রামে শিশু-কিশোর ও ছাত্রী-ছাত্রী খেলাধুলার পাশাপাশী লেখাপড়া, কাজকর্মেও মনযোগী হতে পারে। দেশে শিশু-কিশোরদের আনন্দ দেওয়ার জন্য বিনোদন কেন্দ্র যে সব পার্ক “শিশু পার্ক ” রয়েছে সেসব পার্কে ফুটবল, ক্রীকেট, টেনিস বল খেলাও নাই। উন্মুক্ত বিহীন পার্ক নিয়ম বাধা আনন্দ উপভোগ করতে সব শ্রেণীর শিশু কিশোর প্রবেশ করতে পারবে না।
এসব বিষয় সরকারের পাশাপাশী ক্রীড়ামোধী ধনাঠ্য ব্যক্তিগনের নজরে নেওয়া ভাল। দেশে শিক্ষার হার বাড়ার সাথে সাথে প্রায়ই স্কুল নতুন বিল্ডিংয়ে রূপান্তরিত। স্কুলের সীমানায় নতুন বিল্ডিং নির্মাণে স্কুলের মাঠ দিন দিন ছোট হচ্ছে আর ছাত্র-ছাত্রী খেলাধুলা করতে অসুবিধা হচ্ছে। কোন কোন স্কুলের মাঠ নেই বলেই চলে। স্কুলের মাঠ না থাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতার সময়ে শিক্ষকগণ স্কুলের পাশে খালি জায়গা খোজতে দেখা যায়। দেশের স্কুলে উপযুক্ত মাঠ ও প্রতিটি ইউনিয়নে ১টি করে খেলার মাঠ (ওহফড়ড়ৎ) এখন খুবই প্রয়োজন। পূর্বেকার দিনে দেশের মানুষের তুলনায় স্কুল ছিল কম। ছাত্র-ছাত্রীরা দুরদূরান্ত থেকে পাঁ হেঁটে স্কুলে এসে লেখাপড়া করেছে। যার ফলে হাঁটা-চলা করায় শরীর চর্চা ও ব্যায়াম হয়েছে। এখন ঘুম থেকে উঠে ছাত্ররা প্রায়ই স্কুলের ক্লাস ধরতে হয়। কোন কোন স্কুল দূরবর্তী থাকায় শিশুরা গাড়ীযোগে স্কুলে যাতায়াত করতে দেখা যায়। যার ফলে শিশু কিশোরদের শরীর চর্চা, ব্যায়াম ও মাঠের অভাবে শারীরিক ভাবে কতটুকু সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠবে বিবেচনায় নেওয়ার প্রয়োজন। আগে প্রায় বাড়ী ছিল বড়, এখন মানুষ বাড়ছে আর বাড়ী ভাগ বাটোয়ারা হয়ে ছোট হচ্ছে। আগে বাড়ীঘর বড় থাকায় বাড়ীর উঠান (আঙ্গিনায়) ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা করতে দেখেছি, আমি নিজেও উঠানে খেলাধুলা করেছি। এখন দিন বদলের পালায় উঠানগুলো ঘর আর দালান কোঠায় নির্মিত হতে যাচ্ছে। শিশু কিশোর বাড়ীর উঠানে খালি জায়গা না পাইয়া কেউবা বালুর মাঠে, কেউবা ভয়ভীতির উর্ধে রাস্তার উপরে ফুটবল সোটা সোটি করতে দেখা যায়। কিছু দিন পূর্বে সকাল অনুমান ৮.৩০ ঘটিকায় সিলেটের কাজির বাজার ব্রীজ উঠামাত্র কয়েকজন যুবককে ব্রীজের মধ্যখানে ফুটবল সোটাসুটি করতে দেখেছি। এর কিছু দিন পূর্বে সাংবাদিক’র নজরে পড়া টিভির চ্যানেলে দেখেছি শিশুরা রেল লাইনের উপর ও নিকটবর্তী হয়ে ফুটবল নিয়ে খেলাধুলা করছে। এসব ভয়ংকর জায়গা থেকে শিশু কিশোর কে সরিয়ে মাঠ (ওহফড়ড়ৎ) তৈরি করে, “করতে হবে আইন”। দেশের শহর গুলোর বাসাতেও এর কোন কমতী নেই। মাঠ (ওহফড়ড়ৎ) নাই, প্রায় বাসার সামনে (উঠান) খালি জায়গাও নাই বলে চলে। কোন কোন বাসার গলির রোড পর্যন্ত দালান। বাসার সামনে খালি জায়গা না থাকায় গাড়ী বাসার বাহিরে (গলীর রাস্তায়) রেখে বাসাতে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এটা খুবই লক্ষ্যনীয় বিষয় যে, ছোট ছোট শিশু কিশোর ও মা-বাবার আদরের সোনামনিরা বাসার বারিন্দায় অথবা ঘরে বন্দী হয়ে খেলাধুলা করলে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠা কঠিন হতে পারে। বন্দী দশায় থাকা শিশু কিশোর বসে বসে পিএসপি খেলা, রেসলিং দেখা, ভিডিও গেইম খেলা, টিভিতে কার্টন দেখা ও বয়সউর্ধ (১৪-১৬) বছরের যুবক যুবতীরা মোবাইলে ও কম্পিউটারে ফেইসবুক চালানো ও মোবাইলে স্বল্প টাকায় মিনিট ক্রয় করে দীর্ঘ মেয়াদি ফোনালাপ ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। কিছু কিছু যুবক-যুবতী চলার পথে হাত দিয়ে মোবাইল টিপায় আর মুখ দিয়ে অন্যের সাথে কথা বলে “খুবই বিজি ব্যস্ত” বিজ্ঞানের আবিস্কারকৃত মোবাইল মানুষের ভাল-মন্দ সংযুক্ত করেছে। পূর্বেকার দিনে এসব খেলাতো ছিলনা বিধায় আমাদের ছেলে মেয়েরা সবল, সুস্ত, মনোবল ও সু-স্বাস্থ্যের অধিকারি হয়ে বেড়ে উঠেছিল। যার ফলে ছোট খাটো দূর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর হার ছিল কম। এখন ভেজাল খাদ্যে গড়ে উঠা চক চক সুন্দর চেহারা আমাদের সোনামণিরা দূর্ঘটনায় পড়লে কেঁড়ে নিয়ে যায় প্রাণ। আমাদের ছেলে মেয়েরা শরীর চর্চা ও দৌড়াদৌড়ি খেলাধুলা না করে বেঁড়ে উঠলে পিতা মাতার জন্য অমঙ্গলও হতে পারে। দেশে লেখাধুলার মৌসুম শীতকালীণ সময়ে দেখা যায় বেশী। কারণ হলো দেশে মাঠ (ওহফড়ড়ৎ) না থাকায় শীত মৌসুমে গ্রামে ধান কাঠা শেষ হলে বা চাষের জমিন শুকানো থাকলে খেলাধুলার জায়গা বাহির হয়। আবার জমির মালিক বাধা দিলে খেলাধুলা বন্ধ রাখতেও হয়। বিগত শীত মৌসুমে আমার জানা গ্রামে শিশু-কিশোর জমিতে ফুটবল খেলতে গেলে জমির মালিক বাধা প্রদান করায় আমি তাহাদের অন্যত্র জায়গায় খেলতে বলি।শিশু কিশোরা অন্য স্থানে খেলা অর্থাৎ শুকানো জায়গা খুজতে পাশের গ্রামের নিকটবর্তী যাইয়া খেলা শুরু করে, সেখানে ফুটবল খেলা শেষ হওয়ার পর পর কিছু লোকজন বলে উঠেন “সেখান থেকে এখানে কেন খেলতে এলে” এসব বাধার জবাব দিতে হচ্ছে তাদের। এসব শিশু কিশোর আমার ও আপনার সন্তান। তাদেরকে পড়ালেখা করার পাশাপাশী খেলাধুলা করার সুযোগ করে দিতে হবে এদেশে। কিছু কিছু এলাকায় শীত মৌসুমে জমিতে সবজি চাষ, ধান চাষ সহ অন্যান্য চাষ করতে নদী বা খাল-বিল হতে পানি উত্তোলনের ফলে শিশু কিশোর খেলার মাঠ খোজতে কঠিন হয়। “ভাত বাংলাদেশীদের প্রধান খাদ্য” ক্ষেত-খামার করে আমরা বাছতে হবে এদেশে। ছেলে-মেয়েদের শারীরিক ভাবে বেড়ে উঠতে পড়ালেখার পাশাপাশী খেলাধুলা করার সুুযোগ করে দিতে হবে এদেশের মাটিতে। না হয় বন্দী অবস্থায় পিএসপি, রেসলিং, ভিডিও গেইম খেলাধুলা করলে সুস্থ মন ও সু-স্বাস্থ্যের অধীকারী নাও হতে পারে। তাই শিশু-কিশোর সাধারণ ভাবে বেড়ে উঠতে ও আগামী দিনে দেশের ভবিষ্যত বিবেচনায় ইউনিয়ন ভিত্তিক খেলার মাঠ (ওহফড়ড়ৎ) নির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে।