শেখ মোর্শেদ, অতিথি প্রতিবেদক : খেলা দেখালেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার বিতর্কিত ওসি আব্দুল হাই। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল বাছিরের অভিযোগের জবাব দিয়েছেন থানার নিজস্ব ই মেইল আইডি থেকে। কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিবাদলিপি গতকাল শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের নিজস্ব আইডি থেকে এই মেইলটি সংবাদপত্র কার্যালয়ে প্রেরন করা হয়। এরপর থেকে এই মেইল নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্য সম্বলিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি পুলিশ স্টেশন থেকে পাঠানো হলো এবারই প্রথম।
কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের কোন্দল ও ওসির দুর্নীতির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার সিলেটে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মো. আব্দুল বাছির। শুক্রবার জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় এই সংবাদ সম্মেলনের খবর প্রকাশিত হয়। সন্ধ্যা ৬টা ৪৪ মিনিটে কোম্পানীগঞ্জ পুলিশ স্টেশনের নিজস্ব আইডি থেকে ‘কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ’ সম্বলিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি আসে। ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ আব্দুল বাছিরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আমজদ, সাধারন সম্পাদক আপ্তাব আলী কালা মিয়া সহ অন্যান্য নেতারা।
পুলিশ স্টেশন থেকে আসা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ও সম্ভাব্য উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী শামীম আহমদকে নানা ‘বিতর্কিত’ উপাধিতে ভুষিত করা হয়। বৃহস্পতিবার উপজেলা চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন- কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা ও দুর্নীতিবাজ ওসি মিলে তার পরিবারের বিরুদ্ধে নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করছেন। গতকাল থানা স্টেশন থেকে আওয়ামী লীগের প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর ব্যাপারে থানা আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ আব্দুল বাছিরের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি বলেন- সংবাদ সম্মেলনে তিনি যে অভিযোগ করেছেন এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর মধ্য দিয়ে সেটি আবার প্রমানিত হলো। তিনি বলেন- ওসির তৈরী করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ভয়ে তটস্থ হয়ে সাক্ষর করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আর ওসি সেটি থানার নিজস্ব ই-মেইল আইডি থেকে সংবাদপত্র কার্যালয়ে প্রেরন করেছে। এটা অপরাধের সামিল বলে দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
ওসি আব্দুল হাই উপজেলা চেয়ারম্যান কর্তৃক ওসির চাঁদাবাজির অভিযোগ খন্ডন করেছেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কাঁধে ভর করে। অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানীগঞ্জের পাথর লুটপাটে সহায়ক হিসেবে ওসি আব্দুল হাই আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীদের সাথে রাখছেন। বাংলাদেশ রেলওয়ের একমাত্র রজ্জুপথ ভোলাগঞ্জ রেলওয়ে রোপওয়ে বাংকার, লিলাইবাজার, গুচ্ছগ্রাম, সাদাপাথর, ধলাই নদীতে ওসির শেল্টারে অপকর্ম চালিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ নামধারী পাথরখেকোরা। আর এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় ওসি আব্দুল হাই কোনো ধরণের রাখডাক না করেই সরকারি ই-মেইল ব্যবহার করে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নেমেছেন কোমরে গামছা বেঁধে।
একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সরকারি ই-মেইল ব্যবহার করে প্রতিবাদলিপি পাঠানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। চাকুরীবিধি লঙ্ঘন করে সরকারি সম্পত্তি দিয়ে এ ধরণের প্রতিবাদ পাঠানোকে নৈতিকতাবিরোধী বলে অভিমত সুশীল সমাজের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. কামরুল আহসান বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দরা উনাদের নিজস্ব অথবা অন্য কোথাও থেকে প্রতিবাদ পাঠাতে পারেন। কিন্তু থানা পুলিশের নিজস্ব ই-মেইল আইডি থেকে সংগঠনের প্যাডে প্রতিবাদ পাঠানো উচিৎ হয়নি।
বিষয়টি সিলেটের পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামানকে অবগত করা হলে তিনি বলেন- কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসিকে ফোনে পাচ্ছিনা। আমি বিষয়টি এডিশনাল এসপিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বলে দিয়েছি। আমিও বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পুলিশ স্টেশনের ই-মেইল সরকারি কাজে ব্যবহৃত হয়। এটা কোন ব্যক্তিগত বা সংগঠনের কিংবা দলের কাজেও ব্যবহৃত হতে পারে না। কিন্তু কোম্পানীগঞ্জ থানার সরকারি ই-মেইল থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের স্বাক্ষরিত যে প্রতিবাদ প্রেরণ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। এতে প্রমাণ হয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ওসির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছিলেন সেই অভিযোগগুলো শতভাগ সঠিক। এতে আরো প্রমাণ হয়, ওসির আস্থাভাজন ও ওসির কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আদায় করছেন স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ নেতারা।