ডেস্ক : ছাতকে ফারুক হত্যাকান্ডের তদন্ত ও বিচার বাধাগ্রস্ত করতে স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান পৌর মেয়র আবুল কালাম ও তার ভাই শামীম আহমদ চক্র অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাতকের উত্তর খুরমা ইউনিয়নের দুইবারের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল আহমদ। এছাড়া গডফাদার হিসেবে হত্যাকান্ডে জড়িতদের বাঁচাতে কালাম ও শামীম চক্র নিহতের সহজ সরল স্ত্রী রেহেনা বেগমকে দিয়ে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও তাকে জড়িয়ে মিথ্যে সংবাদ পরিবেশন করেছে বলে দাবি করেন তিনি। মঙ্গলবার ৩ জুলাই সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিল্লাল আহমদ বলেন, নিহত ফারুক আহমদেরর পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের সম্পর্ক সুদীর্ঘ কালের। ফারুকের আপন চাচা খুরমা উত্তর ইউনিয়নের তিন বারের চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল কদ্দুছের প্রতিটি নির্বাচনে আমাদের পরিবারের অকুন্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল। এর জন্য ফারুকের পিতা মরহুম আব্দুস ছত্তার এবং আপন চাচা আব্দুল কদ্দুছ চেয়ারম্যান আমৃত্যু মুহিবুর রহমান মানিকের একনিষ্ট সমর্থক ও কর্মী ছিলেন। কৈশোর কাল থেকে ফারুক আহমদও মুহিবুর রহমান মানিক এর একজন একনিষ্ট সমর্থক এবং দলীয় কর্মী ছিলেন।
তিনি বলেন গত ২২ জুন রাতে ফারুক নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পেয়ে পরদিন সকালে তিনি ছাতক থানার গিয়ে বিষয়টি অবগত করেন। পরে পুলিশ প্রশাসনকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ও ফারুকের বাড়িতে যান। পাশাপাশি ফারুকের সন্ধানে এলাকাবাসীকে নিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করেন। ফারুকের লাশ উদ্ধারের পর মুহিবুর রহমান মানিক এমপি দ্রুত অপরাধীদের চিহ্নত করে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। কিন্তু কালাম-শামীম চক্র ফারুকের শশুড় বাড়ির সহযোগিতা নিয়ে ফারুকের স্ত্রীকে হাত করে নির্লজ্জ্ব রাজনীতি শুরু করে। লাশ ময়না তদন্তের আগেই ছাতক শহরে চেয়ারম্যান বিল্লাল আমদ ও এমপির বিরুদ্ধে মানহানীকর শ্লোগান দিয়ে মিছিল করে। এর অংশ হিসেবে তারা ফারুকের স্ত্রীকে সিলেটে এনে সংবাদ সম্মেলনে এমপি ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্য দেওয়ায়।
চেয়ারম্যান বিল্লাল বলেন, ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুজন মিয়া চৌধুরী স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে এলাকায় চিহ্নিত। ১৯৭১ সালে সুজন চৌধুরীর দেশবিরোধী কর্মকান্ড নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ খসরুর ‘রক্তাক্ত ৭১ সুনামগঞ্জ’ ও মুৃক্তিযুদ্ধ গবেষক তাজুল মোহাম্মদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থে লেখা আছে। ১৯৯০ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এই সুজন মিয়া চৌধুরী তখনকার তরুণ নেতা মুহিবুর রহমান মানিকের কাছে বিশাল ভোটের ব্যবধানে লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করেন। এ পরাজয় সহজভাবে মেনে নেননি সুজন মিয়া ও তার পরিবার। কৌশলে সুজন মিয়া তার দুই ভাতিজা কালাম ও শামীমকে আওয়ামী লীগের লেবাস পরান। এর পর থেকেই কালাম-শামীম চক্র আওয়ামীলীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে অর্থ-বিত্তের মালিক হতে থাকে। ১৯৯১ সাল থেকে বিগত ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই ৬বার আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রাপ্ত মুহিবুর রহমান মানিককে নৌকা প্রতীকে ভোট না দিয়ে এমপি মানিকের জীবন ও রাজনীতিকে চীরতরে ধ্বংস করার জন্য হামলা মামলাসহ নানা যড়যন্ত্র করছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শামীম আহমদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় দৌড় ঝাপ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে কোনো সাড়া পাননি। পাশাপাশি বিভিন্ন গনমাধ্যমে ছাতক-দোয়ারা নির্বাচনী এলাকায় বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের পুনরায় দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তী নিশ্চিত মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় শামীম হতাশ হয়ে তার পুষা সন্ত্রাস বাহিনী নিয়ে মুহিবুর রহমান মানিকের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এক নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন।
বিল্লাল বলেন, ফারুকের স্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গত তিন বছরের মধ্যে অন্তত ৫ বার আমার সহযোগীরা ফারুকের ওপর হামলা করেছে এবং আমি ফারুকের ওপর ৫টি মিথ্যা মামলা করেছি। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হলো সম্পত্তি নিয়ে আপন চাচাতো ভাইদের সাথে দীর্ঘদিন থেকে ফারুকের বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জের ধরেই তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে এবং তারা একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি মামলাও করেছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকার মুরব্বীদের সাথে নিয়ে তাদের বিরোধটি নিস্পত্তির চেষ্টা করেছি। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে রেহেনা বলেছেন মৃত্যুর আগে ফারুক তাকে জানিয়েছেন যেকোনো সময় আমি তাকে হত্যা করতে পারি। মূলত কুচক্রিমহলের ইন্ধনে তিনি বানোয়াট ও মিথ্যা এই বক্তব্য দিয়েছেন। ফারুকের সাথে আমার কখনো কোনো বিরোধ ছিল না। তিনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বীও ছিলেননা। ফারুক কখনো থানায় অথবা এলাকার কোনো মানুষের কাছে আমার নামে অভিযোগও করেননি।
ফারুক কালাম-শামীম চক্রের কোন আত্মীয় নন এবং ফারুকের সাথে তাদের কোন রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। এই হত্যাকান্ডের প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত ও সুষ্ঠু বিচারের জন্য মুহিবুর রহমান মানিক এমপি প্রশাসনকে জোর তাগিদ দিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু হত্যাকান্ডটিকে ধামাচাপা দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে কালাম-শামীম চক্র ফারুকের সহজ-সরল স্ত্রীকে প্রভাবিত করে ধু¤্রজাল সৃষ্টি করছে। আমি মনে করি ন্যায় বিচারের স্বার্থে সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত খুনীদের খোঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি। কিন্তু অপপ্রচার বন্ধ না হলে প্রকৃত খুনীদের চিহ্নিত করার বিষয়টি দূরহ হবে। একই সাথে নিরপরাধ ম্নাুষের হয়রানী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট রাজ উদ্দিন, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য মো. ছানাওর, ছাতক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান, যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দ আহমদ, গয়াছ আহমদ চেয়ারম্যান, আফজাল হোসেন, ছাতক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাদাত লাহিন, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল আমীন ও আনোয়ার রহমান তোতা, এডভোকেট আশিক আলী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সিলেট মহানগরের সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান, আওলাদ হোসেন চেয়ারম্যান, চান মিয়া চৌধুরী, আব্দুল মোছব্বির চেয়ারম্যান, শায়েস্তা মিয়া চেয়ারম্যান, উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুরাদ হোসেন প্রমুখ।