Please Share This Post in Your Social Media
ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি, আত্মসমর্পণ। মহান আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনিত ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। ইসলাম দিয়েছে ধনীর উপর গরীবের অধিকার। আমাদের সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে,আমরা যে যাই হইনা কেন প্রত্যেক মুসলমান একে অন্যের ভাই ভাই। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে দুটি। একটি ঈদুল ফিতর, অন্যটি ঈদুল আযহা। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদের দিন নতুন জামা পড়ে আমরা ঈদগাহে যাই। বাড়ীতে মহিলারা নানা রঙ্গে নানা স্বাদে তৈরি করে হরেক রকমের পিটা। আনন্দ উল্লাসে মেতে উটে পুরোটা সমাজ। মুসলমানদের কাছে ঈদুল আযহার চেয়ে ঈদুল ফিতরের আমেজটা অনেক বেশি বলে উপলব্ধি করা যায়।কারণ, পূর্ণ এক মাস সিয়াম সাধনার পর খুশি সওগাত নিয়ে আমাদের মাঝে এসে উপস্থিত হয় পবিত্র ঈদুল ফিতর। আলোচ্য প্রবন্ধে ঈদ এবং আমাদের করণীয় বিষয় নিয়ে আলোকপাত করার ইচ্ছা পোষণ করছি। যদি মহান আল্লাহ আমাকে জ্ঞান দান করেন।
রোযার ঈদকে, কেন ঈদুল ফিতর বলা হয়?
বিত্তহীনরা বিত্তশালীদের করুণার পাত্র নয়। বরং ধনীদের উপর গরীবের অধিকার রয়েছে। পবিত্র রামাদ্বান মাসে বিত্তশালীরা বিত্তহীনদেরকে রোযার ত্রুটি বিচ্যুতি পূর্ণ করার জন্য ফিতরা দিয়ে থাকে। এজন্য রোজার ঈদকে ঈদুল ফিতর বলা হয়। যাকাত যেমন ফরজ তাদের উপর তেমনি ফিতরা আদায় করাও ওয়াজিব। তবে ইচ্ছা করলে অন্যান্যরা ও প্রদান করতে পারবে। এতে অনেক সাওয়াব হবে।
আসুন সবাই মিলে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিই!
ঈদ শব্দের অর্থ খুশি / আনন্দ উল্লাস। অতএব আনন্দ তো একা উপলব্ধি করা যায় না।
এজন্য প্রয়োজন একটি সমাজ। যেখানে থাকবেনা কোন ধরনের বিচ্ছেদ। ঈদের আনন্দ ধনী-গরীব, রাজা-বাদশাহ সবার জন্য সমান। এতে নেই কারো কোন মতভেদ। ছোট শিশুরা ঈদ বলতে বুঝে নতুন জামা। মনে পড়ে সেই নিকটতম ছোট বেলার কথা। ঈদের আগে আম্মুকে বলতাম, ঈদের দিনে আব্বু যদি নতুন জামা না দেন তাহলে ঈদ করবো না।
তখন ঈদ বলতে মনে করতাম নতুন জামা পরে প্রতিবেশি বন্ধু-বান্ধবদের বাড়ী যাওয়া। আজও আমাদের মত কচি-কাচা শিশুরা ঈদ বলতে মনে করে নতুন জামা পরিধান করে আনন্দ উল্লাস করা। কিন্তু যে শিশুটির পিতা কিছু পূর্বে মারা গেলেন সে কী ঈদ করবে না?
সে কী আমাদের সাথে ঈদগাহে যাবে না?
সে কী আমাদের সাথে আনন্দ উল্লাসে অংশ নেবে না?
নাকি বিধবা মায়ের শাড়ীর আঁচল ধরে নতুন জামা দাও, নতুন জামা দাও বলে শুধু কাদঁবে?
নিয়তির নির্মম পরিহাস। এমন ঘটনা ঘটে গেল ত্বোহার বেলায়। মনে হয় ঈদের দু’চার মাস আগে ত্বোহার বাবা কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, এরি মধ্যে দিয়ে ঈদ এসে উপস্থিত। কিন্ত ত্বোহার বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর মানুষ। তার রেখে যাওয়া কোন সম্পদ নেই বললেও চলে। ঈদের দিন যত এগিয়ে আসছে,ত্বোহার মার হতাশার মাত্রা ততবেশি বাড়ছে। ঈদের আগের দিন ত্বোহা মাকে বলছে,আমাকে কী নতুন জামা কিনে দেবে না?
আমার বন্ধু সুমন বলেছে, তার আব্বু তাকে নতুন জামা কিনে দিবে। মা ছেলেকে বলছে যদি খোদার ইচ্ছা হয় তাহলে দেব। এরি মধ্যে দিয়ে দিনের সমাপ্তি টেনে পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত গেল। রাত এসে উপস্থিত। ত্বোহাকে মা ঘুম পাড়িয়ে কাঁদছে।
এমনি এমনি করে রাত কেটে গেল। সকাল বেলা পাশের বাড়ীর সবাই নতুন জামা পড়ে ঈদগাহে যাচ্ছে। ত্বোহা নতুন জামার জন্য কাঁদছে। মা ছেলেকে সান্তনা দিচ্ছেন, এমন সময় ত্বোহার প্রতিবেশি বন্ধু সুমন নতুন জামা পরে ত্বোহার বাড়ীতে আসে। সুৃমন বলে তুমি কি নতুন জামা পরবে না? কি মজা আমার আব্বু আমাকে নতুন জামা কিনে দিয়েছেন! এ কথা শুনে ত্বোহার চোখে জলের মাত্রা আরোও বেড়ে গেল। হঠাৎ ডুকরে কেঁদে বললো, মা তুমি ভাল নয়। মা জননী বললেন, কেন বাবা?
বললো আব্বু প্রতি বছর ঈদে আমাকে নতুন জামা কিনে দিতেন। তুমি নতুন জামা দাওনি। আজ আমার বাবা যদি পৃথিবীতে থাকতেন তাহলে আমাকে নতুন জামা কিনে নিজ হাতে পরিয়ে দিতেন।
মা ভারাকান্ত হৃদয় দিয়ে শাড়ী আঁচল দিয়ে ছেলের চোখ মুছে দিচ্ছেন, আর বলছেন শান্ত হও বাবা,
আল্লাহ্ যদি দেন তাহলে নতুন জামা পরবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমার পাশের বাড়ী আত্মীয় স্বজন, এতিমরা যদি ঈদগাহে না যায়, বাড়ীতে বসে নতুন জামার জন্য কাঁদে, তাহলে ঈদের আনন্দ কি ভাগ করে নেওয়া হল?
নিশ্চিয়ই হলো না।
তাহলে আমাদের উচিত কী? আমাদের প্রতিবেশির প্রতি আমার কি কোন দায়-দায়িত্ব রয়েছে?
নিশ্চয় রয়েছে যে দায়িত্ব পালন না করলে জাহান্নামি হওয়া অবকাশ আছে। আমরা যদি একেকজন একটি করে ফিতরা অথবা যাকাতের টাকা সেই ছেলেটির হাতে তুলে দেই। তাহলে তাদের পরিবারের সবার নতুন জামার টাকা হয়ে যাবে, তারাও আমাদের মত আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠবে,এতে সমাজে আসবে শান্তি। দেশ হবে দারিদ্র মুক্ত।
লেখকঃ
মাও:আব্দুল বাছিত আল হাসান
কলামিস্ট,
ফাযিল (বিএ), কামিল (আল হাদীস)
Related