সিলেট ৭১ নিউজ ডেস্ক:বিচার বিভাগকে এগিয়ে নিতে যা কিছু দরকার, তার সবকিছুই করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নতুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রের প্রধান তিন অঙ্গ- বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের চেষ্টা তিনি করে যাবেন।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর রোববার ওই দায়িত্বের প্রথম দিনে সুপ্রিম কোর্টের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিচারপতি মাহমুদ হোসেনের এ বক্তব্য আসে।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি অঙ্গের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই কেবল একটি দেশ উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে পারে। যেখানে তিনটি অঙ্গের কাজের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকে, সেখানে উন্নয়ন ব্যহত হয়। এই তিনটি অঙ্গের কাজের মধ্যে যেন সমন্বয় রক্ষা করা যায় সেজন্য আমি সচেষ্ট থাকব।”
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের পূর্বসূরি বিচারপতি এস কে সিনহার সময়ে নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের টানাপড়েন ছিল অন্যতম আলোচনার বিষয়।
নানা নাটকীয়তার মধ্যে বিচারপতি এস কে সিনহা গত অক্টোবরে ছুটি নিয়ে বিদেশে যান এবং পরের মাসে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন দেশে।
বিচারপতি সিনহা ছুটিতে যাওয়ার সময়ই আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক আবদুল ওয়াহহাব মিঞার হাতে ওই দায়িত্বভার দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। কিন্তু শুক্রবার তিনি নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে নিয়োগ দিলে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার ১০ মাস আগেই পদত্যাগ করেন বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা।
শনিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। রোববার সকালে তিনি সুপ্রিম কোর্টে এলে রেজিস্ট্রার জেনারেল জাকির হোসেনসহ সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
রেওয়াজ অনুযায়ী আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষে নতুন প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। আপিল ও হাই কোর্ট বিভাগের বিচারক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- দুই পন্থি আইনজীবীরাই নতুন প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানাতে এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
অনুষ্ঠানে শুরুতে বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদিন বক্তব্য দেন।এরপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এমন ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে হবে যে, আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করার সাথে সাথে শক্তিমান দুর্বল, ধনী-গরীব সকলের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মে যে, তারা সকলেই সমান এবং আদালতের কাছ থেকে শুধু আইন অনুযায়ী তারা ন্যায্য বিচার পাবেন। এতে করে আদালতের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা দৃঢ় হবে।”
নতুন প্রধান বিচারপতির মতে, মামলা জটই এখন আদালতের সবচেয়ে বড় সমস্যা। “এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি অকারণে মামলা মুলতবি, প্রত্যাহারের প্রবণতা পরিহার করতে হবে। বিচার ব্যবস্থায় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করে সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশনের পথে অগ্রসর হতে হবে।”
বিচারক নিয়োগে আইন প্রণয়নের অপরিহার্যতার কথা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, “সংবিধানের ৯৫(২)(গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারপতি নিয়োগের আইন প্রণয়ন অপরিহার্য। বিচারকদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে সততা। তার জবাবদিহিতার জায়গা হচ্ছে তার বিবেক। সংবিধান ও আইন তার একমাত্র অনুসরণীয়।”
বার ও বেঞ্চের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও সহযোগিতার মনোভাব বজায় রাখার আহ্বান জানান নতুন প্রধান বিচারপতি।
সংবর্ধনা শেষে প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ রোববার বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বিচার কাজ পরিচালনা করবে।
সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, বিকালে সাভারে গিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন প্রধান বিচারপতি। তার আগে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি।