আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবির প্রেক্ষিতে চাপের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল ঘোষণার পর প্রচারণায় এমপিদের সুযোগ এবং নির্বাচন পেছানোর দাবি নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে কাজী রকিবউদ্দীন নেতৃত্বাধীন কমিশন। গতকাল রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে এমপিদের প্রচারের সুযোগ চেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। তবে বিএনপি তাদেরকে প্রচারে সুযোগ না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। একইসঙ্গে ১৫ দিন নির্বাচন পেছানোর দাবিও জানায় দলটি। তবে দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের দাবি নিয়ে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি ইসি। আজ সোমবার কমিশনের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সবার কথা শুনেছি। নিবন্ধিত দলগুলো যেসব দাবি করেছে, সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার ইত্তেফাককে বলেন, কমিশন নির্বাচনী প্রচারণায় এমপিদের সুযোগ রাখলেও আইন মন্ত্রণালয় তাতে আপত্তি জানিয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণেই এমপিদের প্রচারণায় বাইরে রাখা হয়। এখন তফসিল ঘোষণার পর এমপিদের প্রচারণায় সুযোগ দেয়া যুক্তিসঙ্গত দাবি নয়। একইভাবে আইনগতভাবে নির্বাচন পেছানোরও সুযোগ নেই।
স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্তর পৌরসভায় নতুন পদ্ধতির এই নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের রাজনীতিতে ইতিমধ্যে উত্সবের আমেজ বইতে শুরু করেছে। প্রথমবারের মত মেয়র পদে সরাসরি রাজনৈতিক দল মনোনীত প্রার্থী দেয়ার সুযোগ থাকায় জাতীয় রাজনীতিতেও এই নির্বাচন ভিন্ন মাত্রা যোগ হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে।
ইসির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্বাচন না পেছানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনাররা মোটামুটি একমত। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণায় এমপিদের সুযোগ দেয়ার বিষয়ে ঐক্যমত হতে পারেননি নির্বাচন কমিশনাররা। গতকাল তিনটি দলের পৃথক দাবির পর বিকালে সিইসি নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী ও ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। কিন্তু অন্য তিনজন কমিশনারের মধ্যে একজন ঢাকার বাইরে, একজন অসুস্থ এবং আরেকজন ব্যস্ত থাকায় ওই বৈঠকে তারা অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি সিইসি। আবার বিএনপির মতো ওয়ার্কার্স পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়েছে। জাপা ১০ দিনের জন্য মনোনয়নপত্র জমার সময়সীমা বৃদ্ধির দাবি করেছে। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির দাবি নিয়ে আজ বেলা ১১টায় কমিশন সভা ডেকেছেন সিইসি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গতকাল সিইসির সঙ্গে দেখা করে পৌর নির্বাচনে এমপিদের প্রচারে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি জানায়। প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন।
পৌর নির্বাচনের তফসিল অন্তত ১৫ দিন পেছানোর জন্য নির্বাচন কমিশনে লিখিত দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল দুপুর ২টায় ১৫ দফা দাবি নিয়ে কাজী রকিবউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল। আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, এস এম আব্দুল হালীম, সুজা উদ্দিন ও যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলুর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার জন্য আরো ১০ দিন সময় বৃদ্ধির দাবি সিইসির কাছে করেছে। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও সাইদুর রহমান টেপা।
নির্বাচন পেছালে আইন ভঙ্গ হবে : সিইসি
গতকাল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর কাজী রকিব সাংবাদিকদের বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই ২৩৬ পৌরসভায় ৩০ ডিসেম্বর ভোট করা হচ্ছে। যথেষ্ট সময় রেখেছি, যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর ভোট করার লাস্ট চান্স। তিনি বলেন, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ, বিশ্ব ইজতেমা ও পরীক্ষার কারণে ডিসেম্বরে ভোট করার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি সবার জানা।
আরো ৭টি দলের প্রত্যয়নকারীর নাম জমা
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, এলডিপি, বাসদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গতকাল পৌর মেয়র পদে প্রত্যয়নকারী ব্যক্তির তালিকা জমা দিয়েছে।