ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেট ওসমানী হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফনার্স রেখা রাণী বনিক। বাড়ি নেয়াখালী জেলায়। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবিকা পদে কর্মরত। স্টাফনার্স বা সেবিকা হলেও দৃশ্যত মেডিকেল অপিসার। নার্সের লেবাস কোনদিনই পরেন না তিনি। ২০০৫ সালে বিয়ে করেন শেখর বনিক নামের একব্যক্তিকে। জানা গেছে, স্বামী ৭০লাখ টাকা আত্মসাত মামলায় পলাতক ও আত্মগোপনে থাকায় বিয়ের পর থেকে তিনি নিঃসন্তান ও নিঃসঙ্গ দিনযাপন করেন। সিলে এমএজি ওসমানী হাপাতালে যোগদানের পর অদৃশ্য শক্তিমূলে তিনি তার সহযোগী অপর তিনজন নিয়ে গড়ে তোলেন একটি ক্ষমতাধর ‘চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট’। রেখা-তুলষী নামের এ সিন্ডিকেটের অপর সদসরা হলেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সেবা তত্বাবধায়ক তুলসী রাণী দে,। রেখা বনিক স্টাফনার্স হলেও কার্যত তিনিই নার্সিং বা সেবা বিভাগের ক্ষমতাধর সুপারভাইজার অফিসার। নার্সদের ইনিফরম না পরেই তিন সবসময় সুপারভাইজারের কক্ষে অফিসার হয়ে বসে থাকেন। সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই মূলত সুপারভাইজারের দায়িত্বই পালন করেন তিন। টাকার বিনিময়ে ইচ্ছেমত ডিউটি বণ্টন,বদলী, ছুটি, প্রশিক্ষন, প্রেষন সব কিছুই করে থাকেন। ডিউটিরত স্টাাফনার্সদের কাছ থেকে ওয়ার্ড ভেদে ৫হাজার থেকে শুরু করে মাসে ২০হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়মিত মাসোহারা গ্রহণ করে থাকেন। মাসেমাহারা দিতে না পারলে একাধারে নাইট ডিউটিসহ একাকী ডিউটি করতে হয় নরনীহ স্টাফনার্সদের। প্রশিক্ষণ বা বদলী লেটার আসলে টাকার বিনিময়ে ছাড়পত্র দেন তিনি। টাকা না দিলে ছাড়পত্র দেয়া হয় না। কোন কোন সময় প্রশিক্ষন বদলী ও প্রেষন আদেশপত্র লুকিয়ে রেখে দিয়ে দাবি করে মোটা অংকের টাকা। চাঁদা না দিলে ছাড়পত্র বাতিলও করিয়ে দেন জাল-জালিয়াতি কুটকৌশলের মাধ্যমে। হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের অজান্তে তাঁর অফিসের স্মারক ব্যবহার করে উর্ধতন কর্তপক্ষের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে আদেশ-নিষেধও হাসিল করে নেন তারা। এধরনের অনেক ঘটনা ও অঘটনের অভিযোগ রয়েছে স্টাফনার্স রেখা-তুলষী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।দেশের শাসকদলীয় এক শীর্ষ চিকিৎসক নেতা ও স্থানীয় একজন কথিত সাংবাদিক নেতার সাথে রয়েছে তার হরেক দরহম-মহরম। আর এদের আশীর্বাদেই তিনি এতা বেপরোয়া এবং হাসপাতালের সকল বিভাগ এমনকি পুরো ওসমানী হাসপাতালই নিয়ে গেছেন তার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে । ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলরা ভীত-সন্ত্রস্থ অবস্থায় কর্তব্য পালন করছেন। বিঘিন্নিত হচ্ছে স্বাস্বথ্যসেবা কার্যক্রম। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হাসপাতার কর্তপক্ষ থানায় আধারণ ডায়েরীও করেছেন।
অভিযোগে প্রকাশ, গত বছরের (২০১৬সালের) ২৪জুলাই এক আদেশে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে কর্মরত স্টাফনার্স খাদিজা বেগম,জাবেদা খানম,লায়লা নিলুফার ও সিনিয়র স্টাফনার্স কুলছুমা বেগমকে প্রেষনে নার্সিং কলেজ সিলেট-এ ইন্সট্রাক্টার করে বদলীর করা হয়। কিন্তু স্টাফনার্সের রেখা-তুলষী সিন্ডিকেট তাদের ছাড়পত্র দিতে প্রথমে জনপ্রতি ১লাখ টাকা করে চারলাখ টাকা এবং পরে কমিয়ে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে ২লাখ টাকা দাবি করে। এটাকা দিতে তারা অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের ছাড়পত্র আটকে দেয়া হয়। ছাড়পত্র আটকাতে সিন্ডিকেটের অন্যতম প্রধান ভারপ্রাপ্ত সেবা তত্বাবধায়ক তুলসী রাণী দে স্মারক জালিয়াতির আশ্রয় নেন। কোন প্রকার অবগতি-অনুমতি ও স্বাক্ষর ছাড়াই হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয়ের ০৭.০৯.২০১৬ তালিখের ৩৫২৬ নং স্মারকমূলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের প্রেষন ছাড়পত্র বাতিলের অনুরোধ প্রেরন করেন। জাল ও ভূয়া স্মারকের এ আবেদনের প্রেক্ষিতে সেবা পরিদপ্তর ঢাকা ২০.০৯.২০১৬ তারিখে ওই চার স্টাফনার্সের ডেপুটেশন সংযুক্তি বাতিল করে দেয়। স্মারক জালিয়াতির ঘটনাটি ধরা পড়লে সিলেট ওসমানী-
হাসপাতাল পরিচালক-এর পক্ষে সহকারী পরিচালক ২৫.০৯.২০১৬ তারিখের ৩৮২৯ নং স্মারকে ভারপ্রাপ্ত সেবা তত্বাবধায়ক তুলষী রাণী দে-কে তিন কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে শো’কজ করেন। কিন্তু অজ্ঞাতকারনে তিন কার্যদিবস তো দূরের কথা, চারমাসেও কারণ দর্শান নি সিন্ডিকেট সদস্য তুলষী রাণী দে’। এছাড়াও গত বছরের ২৫সেপ্টেম্বর হাসপাতালের ৪২জন স্টাফনার্স রেখা-তুলষী সিন্ডেকেটের অনিয়ম-দূর্নীতি, চাঁদাবাজি ও হয়রানীর প্রতিকার চেয়ে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রী বরাবরে একখানা স্মারকলিপি প্রেরন করেন। স্বারকরিপি প্রাপ্তির পর সমুহ অভিযোগের তদন্তে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর ঢাকার সসহকারী পরিচালক সৈয়দ গোলাম হোসেনকে সভাপতি করে গত বছরের ২৮ নভেম্বর ৩সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়,যার স্মারক ১০৪২৭/১(৬)। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সিভিল সার্জন অফিস সিলেটের জেলা পাবলিক হেলাথ নার্স জ্যোৎস্না রাণী ঘোষ ও সিলেট নার্সিং কলেজ’র অধ্যক্ষ শিল্পী চক্রবর্তী। তদন্ত কমিটি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার আদেশ থাকলেও তিনমাসেও কোন তদন্ত অনুষ্টান হয়নি। অজ্ঞাতকারনে বারবার তদন্ত অনুষ্টান স্থগিত করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত ১৪ জানুয়ারী তদন্ত অনুষ্টানের জন্য ধার্য করা থাকলেও একই অজ্ঞাত কারনে তা আবারো স্থগিত করে দেয়া হয়। তদন্ত বানচাল করতে রেখা-তুলষী সিন্ডিকেড রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয় নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলেছে। ফলে নিরাপত্তা চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সিলেট কোতোয়ালী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরীও করেছে বলে পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
অভিযোগ ও তদন্তের ব্যাপারে কথিত সিন্ডিকেট প্রধান সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের সিনিয়র সাফনার্স রেখা রাণী বনিকের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি অভিযোগ ও তদন্তের বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং এ ব্যাপারে তাদের কেউ অবগত করেনি বলে জানান।
তবে ভারপ্রাপ্ত সেবা তত্বাবধায়ক তুলষী রাণী দে শো’কজ ও তদন্ত কমিটির কথা স্বীকার করে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ন অস্বীকার করেন।
কিন্ত ঐ সময় সিলেট ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল আব্দুস সবুর মিয়া সেবা অধিদপ্তর কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্ত অনুষ্টানের সত্যতা নিশ্চিত করে বলছিলেন তিনি পরিবারের চিকিৎসার্থে তিনি ছুটিতে রয়েছেন। তাই শনিবার (১৪জানুয়ারী) তদন্ত অনুষ্টান হয়েছে না স্থগিত করা হয়েছে তা তিনি এখনো অবগত নন। কর্মস্থলে আসলে পরে জানতে পারবেন বলে জানান তিনি। তার ডেপুটি ব্যক্তিগত নিারপত্তা বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করার কথা স্বীকার করছিলেন তিনি।