মোঃসেলিম রেজা :সরকারী কর্মকাণ্ড অনেক ধীরগতির হয় তা আগেই শুনেছিলাম।কিন্তু এবার বাস্তবিকভাবে সেই দুর্ভোগের অভিজ্ঞতার স্বীকার হলাম।আমার মায়ের কল্যাণ ভাতার আদেশনামার কার্ড হারিয়ে যায় এপ্রিল মাসে।সেটি নতুন করে ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়া করতে গিয়েই এই দুরভোগের মুখোমুখী হয়েছি।প্রক্রিয়া অনুযায়ী আমরা থানায় জিডি করেছি,যথাযথ অফিস থেকে অনুমতি নিয়েছি।তারপর সমস্ত কাগজ আমি ও আমার মা খুলনা কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড অফিসে জমা দিয়ে আসি।
কিন্তু সেখানে গিয়েই হয় ভিন্নরকম এক অভিজ্ঞতা।দাপ্তরিক ঘুষ কাকে বলে তার অভিজ্ঞতা এর আগে আমার ছিল না। কিন্তু উক্ত অফিসে গিয়ে দায়িত্বরত পিয়ন থেকে শুরু করে কর্মকর্তা পর্যন্ত ঘুষ ছাড়া কাজ না করার কথা বলছে।অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বিভিন্নভাবে সেবাগ্রহীতাদেরকে হয়রানী করছে।তথ্যদাতা কর্মচারী সঠিক তথ্য দেয় না,কত দিনের মধ্যে কাজ হবে বা প্রয়োজনীয় তথ্যাদি।উক্ত অফিসে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পরকে এক অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,কল্যাণ বোর্ডের দেয়ালেও টাকা চাই অর্থাৎ অফিসটার সীমাহীন দুর্নীতির কথাই তিনি বুঝাতে চেয়েছেন।
আমরা আমাদের কাজের জন্য টাকা জমা দিয়েছি এপ্রিল মাসে কিন্তু এখন জুন মাস অবধি আমরা সেই কাজের কোন অগ্রগতি পেলাম না।অফিসটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে মোবাইল নম্বর চাইলে তারা বলেন এই অফিসের কোন অফিসিয়াল মোবাইল নাম্বার নেই।এটা কিভাবে হতে পারে আজকের শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশে একটি অফিসের অফিসিয়াল ফোন নম্বর থাকবে না। অফিসটি চলছে মান্ধাতা আমলের প্রক্রিয়ায় যেখানে গেলেই বোঝা যায় সেবাগ্রহিতাদেরকে প্রতিনিয়ত কিভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
বিভিন্ন ওয়েবসাইট শুধুমাত্র তথ্য সন্নিবেশ থাকলেই হবে না বরং ওয়েবসাইটগুলো যেন ব্যবহারকারীদের সাথে সুন্দরভাবে যোগাযোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং দপ্তর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যুক্ত হয়ে গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।মূল ওয়েবসাইট গুলোর সাথে ইমেইল, ফেসবুক এবং মোবাইল নাম্বার দেয়া থাকলে ব্যবহারকারীরা সহজেই সেবাদাতার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে একজন লোক নিয়োজিত থাকলে সরকার এবং জনগণ উভয়েই উপকৃত হবে।
সামান্য একটি কার্ডের নতুন কপি ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দেয়া যায়,সেখানে আবেদনের তিন মাস পরেও আমরা জানিনা কবে আমাদের আবেদন করা কাজটি সমাপ্ত হবে।অর্থমন্ত্রী এবারের ২০১৭-১৮ সালের বাজেটে ই-ফাইলিং এর কথা বলেছেন।তার দেয়া তথ্যমতে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী অফিসসহ আরো ২০টি জেলার জেলা প্রশাসনে ই-ফাইলিং সিস্টেম চালু আছে।
কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড অফিসটি গরীব কর্মচারীদের কল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে,অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারীরা বা তাদের পরিবারের কল্যাণের জন্য।কিন্তু অফিসের মান্ধাতা আমলের কর্মপ্রক্রিয়া ও সীমাহীন ঘুষ দুর্নীতি সেবাগ্রহিতাদের জীবনকে অতীষ্ঠ করে তুলেছে।উপরন্তু বিভাগীয় শহরে গিয়ে কাজ করা বা কাজের খোজ নেয়া অসহায় দরিদ্র্য কর্মচারী বা তাদের পরিবারকে চরম ভোগান্তির মধ্যে ফেলে দেয়।এই অফিসের কাজ দ্রুত ডিজিটালাইজেশন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ব্যাপক সময়ক্ষেপণ ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়া সরকারী কাজের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস কমিয়ে দেয়।যেখানে সরকারী অফিসের কাজ জনসাধারণের কল্যাণ নিশ্চিত করা,সেখানে ভোগান্তি কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন দ্রুতই এই ভোগান্তি লাঘবের ব্যবস্থা নেয়া হয়।
লেখকঃকলামিস্ট এবং শিক্ষার্থী,লোকপ্রশাসন বিভাগ,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।