আজ বৃহস্পতিবার পবিত্র হজ। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ানিন’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক। ’ অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার—এই ধ্বনিতে আজ মুখরিত হবে আরাফাতের ময়দান।
তালবিয়া পাঠ করে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে পাপমুক্তির আকুল বাসনায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান (হাজি) আজ মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হবেন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁরা থাকবেন আরাফাতের ময়দানে। কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত-বন্দেগি করবেন এবং হজের খুতবা শুনবেন। মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের খুতবা দেবেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আবদুল আজিজ আল-শেখ।
হজের দিনে সারাক্ষণ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজ পালনকারীদের জন্য অন্যতম ফরজ। এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
ইসলাম ধর্মের মূল পাঁচ স্তম্ভের একটি হচ্ছে হজ। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই হাজিরা এহরাম বেঁধে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনি দিয়ে পবিত্র মক্কা নগরী থেকে মিনার উদ্দেশে রওনা দেন।
এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। আজ মিনা থেকে হাজিরা সমবেত হবেন আরাফাতের ময়দানে। মূলত ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজ। আর ১২ জিলহজ হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।আজ আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর এক আজানে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন হাজিরা। তাঁরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে মুজদালিফায় গিয়ে আবারও এক আজানে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে অবস্থান করবেন খোলা মাঠে। শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর (৭০টি) সংগ্রহ করবেন সেখান থেকে। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা কেউ ট্রেনে, কেউ গাড়িতে, কেউ হেঁটে মিনায় যাবেন এবং নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরবেন।
আগামীকাল শুক্রবার জুমার নামাজের আগে বড় শয়তানের উদ্দেশে সাতটি পাথর ছুড়বেন হাজিরা। এরপর তাঁরা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় পশু কোরবানির পর মাথার চুল ন্যাড়া করে গোসল করে এহরাম (সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড়) বদলে স্বাভাবিক পোশাক পরবেন। পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে (মক্কা নগরী থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত মিনা) পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। এরপর কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় ‘সাঈ’ (সাতবার দৌড়ানো) করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যত দিন থাকবেন তত দিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। এরপর আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর নিজ নিজ দেশে ফিরবেন। যাঁরা হজের আগে মদিনায় যাননি তাঁরা মদিনায় যাবেন।
হাজিদের নিরাপত্তাসহ যাতে কোনো ধরনের কষ্ট না হয় সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি সরকার। এবার নিরাপত্তায় দেশটির নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি এক লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। হাজিদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মিনায় কিছুদূর পর পর রয়েছে হাসপাতাল। তাঁদের যাতায়াতের জন্য ৫০ হাজার বাস ও মিনিবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাজিরা পথ হারিয়ে ফেললে স্বেচ্ছাসেবক, স্কাউট ও হজকর্মীরা তাঁদের নির্দিষ্ট তাঁবু বা গন্তব্যে পৌঁছে দেন। হজ চলাকালে তথ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিশাল আকারের বেশ কিছু স্ক্রিন (পর্দা) বসানো হয়েছে বিভিন্ন পয়েন্টে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রচারিত হচ্ছে। দুই বছর আগে মিনায় পদদলিত হয়ে বহু হাজির মৃত্যুর যে ঘটনা ঘটেছিল তার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে এ ব্যাপারেও সতর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
এবার এক লাখ ২৭ হাজার ৫৯৬ জন বাংলাদেশি হজে যাওয়ার ভিসা পেয়েছিলেন; তাঁদের মধ্যে এক লাখ ২৭ হাজার ২২৯ জন সৌদি গেছেন। সৌদি আরবের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এ বছর বিশ্বের ২২টি দেশ ও সৌদি আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২০ লাখের বেশি মুসল্লি পবিত্র হজ পালন করছেন।