Please Share This Post in Your Social Media
পথচারী ঃ সিলেটে ঈদবাজারে বসেছে অস্ত্রের জমজমাট দোকান। দেশী-বিদেশী ছোট-বড় সব ধরনের অস্ত্রের পসরা বসিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানী করা চায়নীজ কুড়াল, তিন থেকে চার হাত লম্বা রামদা, সাড়ে তিন হাত থেকে চার হাত লম্বা ডেগার-বলচিরা, রকমফের দেশী-বিদেশী চাপাতি, দেশীয় ছোরা, দা, বটি দা, চামড়া উঠানোর ছুরিসহ এমন কোন বে-আইনী ও আইনী অস্ত্র নেই যে যা বিক্রি হচ্ছে না এসব দোকানে। সারা বছর যেগুলো বিক্রি বা রাখা অবৈধ ও বেআইনী, সেগুলো অবাধে এবং দেদারছে বিক্রি হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আযহার সুবাদে।
একটা পশু কোরবানী করতে চার হাত লম্বা রামদা বা সাড়ে তিন হাত লম্বা তলোয়ারের কি প্রয়োজন ? প্রয়োজন আছে নাকি বিদেশ থেকে আমদানী করা চায়নীজ কোড়ালের ? গ্রামীন জীবনে অনেকের বাড়িতে গরু কাটার দেশীয় দা বটি দা ও চামড়া ছুটানোর চাকু থাকেই। আর শহুরে জীবনে বহুলাংশে কোরবানীর পশু জবাই ও কাটা বাটা করে থাকে জবাই শ্রমিকরা। কোরবানী দাতাদের এগুলো কেনার তেমন প্রয়োজন হয় না। কিনলে তো আবার বিপদ কোরবাণী পরে এগুলো রাখবে কই ? ঘরে পেলে পুলিশ ধরে নিয়ে অস্ত্র আইনের ১৯-চ ধারায় মামলা টুকিয়ে দেবে। তাই কোরবানী দাতারা সাধারণত এগুলো কিনেনই না। এবারের ঈদবাজারে একটা চায়নীজ কুড়ালের দাম ২হাজার টাকারও বেশী। একটা রামদার মূল্য ৭থেকে ৮শ’ টাকা, একখানা তলোয়ারের মূল্য হাজার টাকা, ডেগার ও বলচিরার মূল্য ৭ থেকে ৮শ’ টাকা, দেশী চাপাতির মূল্য ৫শ’ টাকা এবং বিদেশী চাপাতির মূল্য ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা। একদিনের কোরবাণীর জন্য এতা চওড়া মূল্য দিয়ে এগুলো কিনবে কে ? শুধুমাত্র জবাই শ্রমিকদের কাছে কিছু,দেশীয় দা, বটি দা ও চামড়া ছোলাইয়ের ছোরা থাকে, মাঝে মধ্যে থাকে দেশীয় চাপাতিও। তারা প্রতিবছর একবার এগুলো ব্যবহার করে হেফাজতে রেখে দেয় অন্যবছর কাজে লাগানোর জন্য। জবাই শ্রমিকরা পতি বছরতো এগুলো কিনেই না। একবার কিনলে চার-পাঁচ বছর তা দিয়ে কাজ করতে পারে। নতুন জবাই শ্রমিকরা অবশ্য কিনে এ কাজে যোগ দিতে পারে । তবে ছবিতে যে সব অস্ত্র দেখা যাচ্ছে এ গুলোর অধিকাংশই পশু জাবাইয়ের কাজে ব্যবহার করা হয় না। শুধুমাত্র চামড়া ছোলাইয়ের ছোট্ট চাকু ও কিছু দেশীয় দা-চাপাতি ব্যবহার হয়ে থাকে। বর্তমান বাজারে থাকা এসব ধারলো অস্ত্র সাধারণত ব্যবহার হয়ে থাকে চুরি-ডাকাতি, রাজনৈতিক লড়াই্ ও জঙ্গী হামলার কাজে। ব্যবহার হয়ে থাকে মিথ্যেভাবে অস্ত্র আইন প্রয়োগে। তাইতো এগুলোর ক্রেতা সাধারণ মানুষ বা কোরবানী দাতারা নয়। এগুলোর ক্রেতারা হচ্ছে চোর-ডাকাত, রাজনৈতিক ক্যাডার এবং পুলিশ ও র্যাব।
রাজনৈতিক ক্যাডার ও জঙ্গীরা ঈদ মওসুমে কোরবানীর নাম ব্যবহার করে সারা বছর জন্য লড়াইয়ের জন্য এসব অস্ত্র কিনে নেয়। আইনশৃংখলঅ রক্ষাকারী সংস্থা পুলিশ-র্যাবও বসে নেই। তারাও সারা বছরের জন্য এসব অস্ত্র কিনে জমা করে রাখে অস্ত্র আইন (১৯-চ ধারা) ব্যবহারের জন্য । কাউকে ধরে যাতে অস্ত্র উদ্ধার দেখাতে পারে বা জঙ্গী সন্ত্রাসী সাজিয়ে উপরওয়ালাদের আশীর্বাদ কুড়াতে পারে সেজন্য তারা এগুলো কিনে রাখে । এগুলো ব্যবহার করে সাজানো মামলা দিয়ে কামাই করতে পারে লাখ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার রাতে সরেজমিনে সিলেট নগরীর বন্দরবাজারে গিয়ে দেখা যায় এসব অস্ত্রের ক্রেতা আদৌ কোন কোরবাণী দাতা নন। এগুলোর ক্রেতা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাদা পোষাকী র্যাব-পুলিশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, কোন কোন রাজনৈতিক নেতা একাই ৪০ থেকে ৫০টি রামদা,চাপাতি, টয়নীজ কুড়াল ও ডেগার-তলোয়ার কিনে নিয়ে থাকেন। ক্রেতাদের মধে র্যাব-পুলিশ সদস্যরাও রয়েছেন বলে জানান তারা।
Related