স্টাফ রিপোর্টার : ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে সিলেট নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও খালি জায়গাগুলোতে অবৈধভাবে পশুর হাট দখল উঠেপড়ে লেগেছেন প্রভাবশালীরা, বিদায় চলছে নানা মূখি পায়তারা। কিন্তু সিলেট নগরীর বৈধ পশুর হাট বলতে কাজিরবাজার। মামলা ঝুলে থাকায় এবারও এই হাটটি চলবে মালিকানায়। এছাড়া নগরীতে অন্যকোনো হাট ইজারা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
অন্যদিকে, একই সঙ্গে অবৈধ পশুর হাট বসতে না দেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই মেয়রের সব তর্জন গর্জনই সার। সিসিক থেকে ইজারা দেওয়া হচ্ছে পশুর হাট। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে অর্ধশত হাট বসাতেও চলছে তোড়জোড়। ইজারা ছাড়া খোদ মেয়রই হজে যাওয়ার আগের দিন নগরীর শাহী ঈদগাহ লাল টিলায় উদ্বোধন করে গেছেন একটি পশুর হাট। সেই সঙ্গে সিসিক থেকে নগরীর চালিবন্দর, সোবহানীঘাট, দক্ষিন সুরমা ঝালোপাড়ার মসজিদের সামনে খালি জায়গায় পশুর হাট বসাতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
নগরীতে বিভিন্ন এলাকায় ১০টি বৈধ কোরবানীর পশুর হাট রয়েছে। ওইসব অনুমোদিত হাট ছাড়া অন্য কোথাও থেকে পশু ক্রয়-বিক্রয় না করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
১০টি বৈধ পশুর হাটগুলো হচ্ছে- কোতোয়ালী থানার কাজিরবাজার পশুর হাট, বিমানবন্দর থানার লাক্কাতুরা চা বাগান মসজিদ সংলগ্ন মাঠের পশুর হাট, দক্ষিণ সুরমা থানার লালাবাজার পশুর হাট, কামাল বাজার পশুর হাট ও নাজির বাজার পশুর হাট, মোগলাবাজার থানার রেঙ্গা হাজীগঞ্জ বাজার পশুর হাট, জালালপুর পশুর হাট ও রাখালগঞ্জ পশুর হাট এবং শাহপরান থানার পীরের বাজার পশুর হাট ও খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠের পশুর হাট।
এসব বৈধ পশুর হাটের তথ্য জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুসা। একই সাথে এ পুলিশ কর্মকর্তা এসব বৈধ হাট ছাড়া অন্য কোনো অবৈধ কোরবানীর পশুর হাট থেকে পশু ক্রয়-বিক্রয় না করতে জনসাধারণের প্রতি আহবানও জানিয়েছেন তিনি।
মুসা জানিয়েছিলেন, গত শুক্রবার নগরীর আম্বরখানায় অবৈধ পশুর হাটে অভিযান চালানো হয়েছে। এরকম সবখানেই অভিযান চালানো হবে। কোথাও অবৈধ পশুর হাট বসতে দেওয়া হবে না। যেখানে অবৈধ পশুর হাট বসবে সেখানকার সংশ্লিষ্ট ওসি এর সাথে যোগাযোগ করে জানালেই হবে। তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিবে।
এছাড়া, অবৈধভাবে পশুর হাট বসলে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার।
সিলেট মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া এক সভায় বলেছিলেন, নগরীর কোন এরাকায় রাস্তা দখল করে বা অবৈধভাবে কোন হাট বসালে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ। সেই লক্ষে গত শুক্রবার রাতে নগরীর আম্বরখানা এলাকায় একটি অবৈধ গরুর হাট ভন্ডুল করা হয়েছিলো।
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার জানান, বৈধ পশুর হাট ব্যাতিত যদি কোন এলাকায় পশুর হাট বসতে দেয়া হবে না । যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্টি অবৈধভাবে হাট বসাতে চায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেট নগরীতে অন্তত অর্ধশত পশুর হাট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা। সম্ভাব্য হাট বসছে নগরীর রিকাবিবাজার, বাবনা পয়েন্ট, উপশহর, বাগবাড়ি, আখালিয়া, মদিনা মার্কেট, মিরাবাজার, কুমারপাড়া, টিলাগড়, মেন্দিবাগ (গ্যাস অফিস সংলগ্ন), ঘাসিটুলা (বেতবাজার), নগরীর উপকন্ঠে মালনীছড়া ও শাহীঈদগাহ খেলার মাঠ, কদমতলী মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, ঝালোপাড়া,চন্ডিপুল পয়েন্টসহ বিভিন্ন এলাকার ফাঁকা স্থানে। এরই মধ্যে অনেক জায়গায় খুঁটিও বসানো হয়েছে। প্রতিবছরই কোরবানী ঈদকে ঘিরে অবৈধ অস্থায়ী পশুর হাট নিয়ে ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগনের বরাবরই অভিযোগ রয়েছে। এসব হাটের কারনে তাদেরকে যথেষ্ট দুর্ভোগ পোহাতে হয়। লোকসানও গুনতে হয় ব্যবাসয়ীদের। তার সাথে নগরবাসীর চলাচলে অসুবিধাতো রয়েছেই। অনেক সময় পশুর হাটগুলো বিভিন্ন খোলা জায়গা ছাড়া রাস্তায় চলে আসে। এতে করে যানচলাচলে বিঘœ ঘটে এমনকি তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সিলেট নগরীতে পশুর হাটের মালিকানায় থাকছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ এলাকার আওয়ামী লীগ ও অংগ সংগঠন ও বিএনপি-ছাত্রদলের প্রভাবশালী নেতারা। এছাড়া নগরীর কাজিরবাজার পশুরহাটে সিটি করপোরেশনের ভূমি থাকলেও মামলার কারণে ঐতিহ্যবাহী এই হাটটি এবারও মালিকানায় পরিচালিত হবে।