গোলাপগঞ্জের মেয়ে সুমাইয়া জান্নাত রাহেলার (২৫) রহস্যজনক অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সিলেটের সর্বত্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।নিহতের পরিবারের অভিযোগ গলায় রশি পেচিয়ে ও মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে । জানা যায় গত ১৫ আগষ্ট রাতে সিলেটের দক্ষিন সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের দক্ষিন পাড়া গ্রামে স্বামীর বাড়িতে ঐ গৃহবধুর অস্বাভাবিক ও রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনায় গোলাপগঞ্জের বাঘার মেয়ে গৃহবধু সুমাইয়া জান্নাত রাহেলা হত্যার অভিযোগে তার স্বামীকে গ্রেফতার ও বিচারের দাবীতে টানা ২য় দিনের মতো বিক্ষোভ সভা ও মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে নিহতের গ্রামবাসী। গতকাল (শনিবার) বিকাল ৪টায় গোলাপগঞ্জ পৌরশহরের চৌমুহনীতে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তারা বলেন অভিলম্বে রাহেলার অপমৃত্যুর মামলাটি হত্যা মামলায় রুপান্তর করতে হবে এবং হত্যাকারী স্বামীকে আটক করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিতে হবে। বাঘা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলতাফ হুসেনের সভাপতিত্বে ও আফজাল আহমদের পরিচালনায় বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য দেন গোলাপগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর রুহিন আহমদ খানঁ, ব্যবসায়ী আবু জাহিদ সিদ্দিক, সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ-১ এর পরিচালনা বোর্ডের সচিব আব্দুল আহাদ প্রমুখ। এর আগে গত শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় উপজেলার বাঘা ইউনিয়নে অধীরের দোকান নামক স্থানে বিক্ষোভ সভা ও মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে নিহতের গ্রামবাসী। গত ১৫ আগষ্ট রাত আনুমানিক ২টায় স্বামীর বাড়ীতে রাহেলার রহস্যজনক অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। নিহতের পরিবারের দাবী রাহেলাকে নির্যাতন করে হত্যা করে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।অনুসন্ধানে জানা গেছে সিলেটের দক্ষিন সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের দক্ষিন পাড়া গ্রামের মৃত ওয়ারিছ আলী (আছা) মিয়ার ছেলে সুলতান আহমদের সাথে কয়েক বছর পূর্বে বিয়ে হয় গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের গোলাপনগর (রজবমারা) গ্রামের মৃত ময়বুর রহমানের ২য় মেয়ে সুমাইয়া জান্নাত রাহেলার। বিয়ের কয়েক বছর পার হলেও কোন সন্তান না হওয়ায় রাহেলা ও স্বামীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছিলনা। এর মধ্যে রাহেলার স্বামী পরকিয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরকিয়ার সম্পর্কের বিষয়টি ধরা পড়ে যাওয়ায় কয়েকদিন থেকে স্বামীর রোষানলে পড়েন রাহেলা। নিহতের মায়ের বরাত দিয়ে নুরুল আহমদ নামে তার এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয় এ প্রতিবেদককে জানান ঘটনার দিন রাতে রান্নাঘরের কাজ শেষে রাহেলা শয়নকক্ষে এসে দেখেন স্বামী প্রতিদিনের মতো অন্য একটি মেয়ের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। মোবাইলে কথা বলতে বাধা দেয়ায় রাহেলাকে শারিরিক নির্যাতন করেন সুলতান । বিষয়টি ঐসময় রাহেলা বাবার বাড়ীতে তার মাকে কল করে জানান। নির্যাতনের কথা শাশুড়ীকে জানানোর জের ধরে স্ত্রীর উপর আরো ক্ষেপে গিয়ে বেধম মারধর করেন সুলতান। এক পর্যায়ে তাহার গলায় রশি পেচিয়ে এবং বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করেন। ঘটনাটি আত্মহত্যা হিসেবে সাজাতে গলায় ওড়না পেচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখেন সুলতান। ঘটনার পর দিন সুলতানের পরিবারের পক্ষ থেকে রাহেলা আত্মহত্যা করেছেন বলে তার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। মৃতদেহের অবস্থান ও লাশের আলামত দেখে সন্দেহ হলে রাহেলার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দক্ষিন সুরমার মোগলাবাজার থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করে। এই ঘটনায় মোঘলা বাজার থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। মোগলাবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খায়রুল ফজল এ প্রতিবেদককে জানান ময়না তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ঘটনাটি ঠিক হত্যা বলা যাচ্ছেনা। লাশের পা মাটিতে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন দীর্ঘক্ষন মৃত দেহ ঝুলে থাকলে দেহ নীচের দিকে নামতে পারে। তিনি আরো বলেন ঘটনার সুষ্টুএদিকে ঘটনার পরপরই ঝুলন্ত অবস্থায় রাহেলার মৃত দেহের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নানা টাইমলাইন ঘুরে এই প্রতিবেদকের টাইমলাইনে আসে। ছবিতে দেখা প্রায় সাদাকালো কামিজ পরিহিত ঝুলন্ত রাহেলার পা ভাঁজ করা ও হাটু প্রায় ঘরের মেঝের কাছাকাছি অবস্থায় রয়েছে। তদন্ত হবে কোন ক্রমেই অপরাধী ছাড় পাবেনা। তবে রাহেলার চাচা সাহাব উদ্দিনের দাবী হত্যাকারী সুলতানকে বাঁচানোর জন্য তার পরিবারের সবাই এটা কে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।