ভক্ত-আশেকানদের জিকির-আজকার, নানা আনুষ্ঠানিকতা ও আজ ভোরে আখেরী মোনাজাত ও (তবারুক) শিরণী বিতরেণের মধ্যে দিয়ে হযরত শাহ জালাল (রহ)’র দু’দিনব্যাপী উরস সম্পন্ন হয়েছে। অলিকুল শিরোমণি হজরত শাহ জালাল (রহ)’র উরস উপলক্ষে গত ক’দিন সিলেট নগরীর চিত্র ছিল অন্যরকম। উরস উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকে ভক্ত-আশেকানরা দলে দলে মাজারে আসতে শুরু করেন ।
সমাপনী দিন উপলক্ষে গতকাল মাজার প্রাঙ্গন ছিলো পূণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখর। সিলেট ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা ভক্তরা মাজারে গিলাফ ছড়ান।
ওরস উপলক্ষে মাজার এলাকায় ছিলো মানুষের ঢল। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকায় মাজারে আসা লোকজন নিরাপদে চলাফেরা করতে পেরেছেন।
শুক্রবার রাত থেকে উরসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী গতকাল সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় মাজারে গিলাফ চড়ানো। চলে বিকাল পর্যন্ত। মাজারে প্রথম গিলাফ চড়ায় মাজার কর্তৃপক্ষ। সকাল ১১টায় গিলাফ চড়ানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে। হযরত শাহজালাল (র.) এর ৬৯৮ তম পবিত্র ওরস মোবারকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী, বাংলাদেশ সরকারের সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শনিবার সকালে গিলাফ প্রদান করে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে এ গিলাফ প্রদান করেন নেতৃবৃন্দ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিনসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
প্রমুখ।
একই সময়ে ওরস উপলক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পক্ষ থেকে সিলেট মহানগর যুবলীগের আহবায়ক আলম খান মুক্তিসহ নেতৃবৃন্দ মাজারে গিলাফ গিলাফ প্রদান করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- আব্দুর রব সায়েম, আনিসুজ্জামান আনিস, আনিসুর রহমান তিতাস, লাহিন আহমদ, ইমামুর রহমান লিটন, দিলওয়ার হোসেন দিলাল, ওমর ফারুক, উবায়েদ বিন বাসিত সুমন, রাসেল আহমদ, নূর আলী, এমদাদ হোসেন ইমু, ইয়াসিন আহমদ, রুমান আহমদ মনা, সাকারিয়া হোসেন শাকির, আদিল ইসলাম, রুপম আহমদ, আবির হাসান রানা,জামাল আহমদ, সেলিম আহমদ, সোহাগ আহমদ, রোকন উদ্দিন, অনুজ তালুকদার, ইলিয়াস আহমদ প্রমুখ।
গিলাফ চড়ানোকালে মাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ, সিলেটের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও হাজার হাজার ভক্ত-আশেকান অংশ নেন।
মাজারে গিলাফ চড়ানো, সন্ধ্যায় পশু জবাই, রাতে কুরআন-খানি, মিলাদ মাহফিল, জিকির-আজকার, ভক্তিমূলক গজল পরিবেশন ছিল উরসের অন্যতম অনুসঙ্গ।
উরসকে কেন্দ্র করে হযরত শাহজালালের (রহ.) মাজার জিকির-আজকারে মশগুল হাজার হাজার ভক্ত, আশেকানের ভিড়ে মিলনমেলায় পরিণত হয়। বাতাসে ভেসে আসে ‘আল-াহু, আল¬াহু’ ধ্বনি। শামিয়ানা টাঙিয়ে দলে দলে জড়ো হয়েছেন অসংখ্য অনুরক্ত।
কণ্ঠে তাদের ‘সিলেটে প্রথম আজান ধ্বনি বাবায় দিয়াছেৃ’, তুমি রহমতের নদীয়া/দোয়া কর মোরে হযরত শাহজালাল আউলিয়াৃ’, জালে¬ জালাল বাবা শাহজালালৃ’, ‘সিলেট ভূমি ধন্য হইল বাবা শাহজালালরে ফাইয়া’, ‘ঝাঁকে উড়ে আকাশজুড়ে দেখতে কি সুন্দর/জালালের জালালি কইতরৃ’,- এসব ভক্তিমূলক গান মাতিয়ে রাখছে পুরো এলাকা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শাহজালালের আশেকান, অনুরক্তদের সঙ্গে সঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে শামিল হওয়া বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠীও মেতেছে ভক্তিমূলক গানের জলসায়। শাহজালালকে (রহ.) উৎসর্গ করে কেউ কেউ বাদ্যযন্ত্রসহকারে আবার কেউ খালি গলায় সুমধুর গানে মাতিয়ে রাখেন আগতদের। শুধু দরগা নয়, মিছিল-স্লোগান করে লাল ফিতা মাথায় বেঁধে ভক্ত-আশেকানদের মাজারে আসার বর্ণিল আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো নগরী।
গত ক’দিন সিলেটে আসা অধিকাংশ যানবাহনের গন্তব্য ছিল হযরত শাহজালালের (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণ। এছাড়া সিলেটের বাইরে থেকে ভক্তদের নিয়ে আসা যানবাহন নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ, শাহী ঈদগাহ, কাজীটুলা, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, পুলিশলাইনস, টিলাগড়,দর্শনদেউড়ীসহ নগরীর বিভিন্ন খালি জায়গায় রাখা হয়েছে।
উরসকে কেন্দ্র করে কোনধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে লক্ষ্যে রেখে মেট্রোপলিটন পুলিশ ও র্যাব ৯ এর পক্ষ থেকে ছিল ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
উরস উপলক্ষে নগরীতে যাতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ট্রাফিক ব্যবস্থা ছিল ঢেলে সাজানো। পোশাকধারি পুলিশের পাশাপাশি মাজার এলাকাসহ আশপাশ এলাকায় সাদা পোশাকের প্রায় দেড় শতাধিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করে।
এদিকে দিনের তুলনায় রাতে মানুষের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। গতকালও দূর দূরান্ত থেকে গাড়ি নিয়ে মানুষকে মাজারে আসতে দেখা গেছে। রাতে মিলাদ মাহফিলসহ জিকির আজকার অনুষ্ঠিত হয়।
ইসলাম প্রচারের জন্য হযরত শাহজালাল (রহ.) ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে ৩৬০ সফরসঙ্গী নিয়ে সিলেট আসেন। ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে ১৯ জিলকদ তিনি ইন্তেকাল করেন। সিলেটে তিনি যে টিলায় বসবাস করতেন সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। এই মাজার সারা বছরই ভক্ত আশেকান ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে।