‘আদিবাসীদের অধিকার কোন বিচ্ছিন্ন দাবী নয়, এটি মানবাধিকার। ২০০৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ে যে ঘোষণাপত্র গৃহীত হয় তাতে বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত থাকে। বাংলাদেশকে জাতিসংঘ ঘোষণা অনুমোদন করার জন্য সিলেটে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আহ্বান জানানো হয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), সিলেট, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় এবং এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (একডো), সিলেট এর যৌথ উদ্যোগে ০৯ আগস্ট ২০১৭ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালিত হয়। এ উপলেক্ষে সকাল দশটায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালি শেষে বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সমাজকর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. ফয়সল আহম্মদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. মোঃ আবদুল গনি, ডিন, স্কুল অব সোস্যাল সায়েন্সেস, শাবিপ্রবি, সিলেট। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সনাক সিলেটের সভাপকি অ্যাডভোকেট মোঃ ইরফানুজ্জামান চৌধুরী এবং একডো’র নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহ। আলোচনা সভায় “বাংলাদেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস”- শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনাব কৃত্তিবাস পাল, সহকারী অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাবিপ্রবি, সিলেট। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ, সমাজকর্ম বিভাগ, শাবিপ্রবি, সিলেট। উপস্থাপিত প্রবন্ধের উপর উন্মুক্ত আলোচনায় বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সনাকের ইয়েস গ্রুপের সদস্যগণ অংশগ্রহণ করে। বক্তব্য রাখেন সনাক সদস্য ও সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস, সনাক সদস্য্য এ কে শেরাম ও টিআইবি সিলেটের এরিয়া ম্যানেজার কমল কৃষ্ণ সাহা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস, সহকারী অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাবিপ্রবি।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাঝে আদিবাসীদের সংকট, সমস্যা ও উত্তোরণের বিষয় নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম ও বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। আদিবাসী জনগোষ্ঠীকেও তাঁদের সমস্যা ও সংকট নিয়ে সোচ্চার হতে হবে। শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আদিবাসীরা পিছিয়ে রয়েছে, আদিবাসীদের ভূমি বেদখল হচ্ছে, ক্ষমতা কাঠামোয় অংশগ্রহণ না থাকায় দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাব তাদের উপর তুলনামূলক বেশী। আদিবাসীদের নিজ নিজ ভাষার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু, স্কুলে আদিবাসী ভাষার শিক্ষক নিয়োগ এবং ভূমি সমস্যা সমাধানে জোর দাবী জানানো হয়। আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে তাঁদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র বজায় রেখে উন্নয়ন কার্যক্রমে যতবেশী সম্পৃক্ত করা যাবে রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন তত বেশী তরান্বিত হবে। আদিবাসীদেরকে শিক্ষা, সংস্কৃতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে বক্তারা অভিমত প্রকাশ করেন।