আত্মহত্যা নয়, খুন করা হয়েছিল জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহকে। খুন করিয়েছিল সালমানের স্ত্রী সামিরা হকের পরিবার। এমন দাবি তুলে একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুড়ে দিয়েছেন রাবেয়া সুলতানা রুবী নামের এক নারী, যিনি সালমান শাহর লাশ উদ্ধারের সময় উপস্থিত ছিলেন। আবার সালমান শাহ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও তিনি।
এদিকে গতকাল রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বলেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি। তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। এটা আমি শুরু থেকেই বলে আসছি। নতুন করে রুবির ভিডিও বার্তা আমাকে আরো অস্থির করে তুলেছে। আমি সালমান শাহর হত্যার বিচার চাই। ’
ওই ভিডিও চিত্রে রাবেয়া সুলতানা রুবী বলেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই। সালমান শাহ খুন হইছে।
আমার হাজব্যান্ড আমার ভাইরে দিয়ে করাইছে। আমি রুবী এখানে ভাইগা আইছি। আমারে খুন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি এতটুকু জানি, ইমন (সালমান শাহ) আত্মহত্যা করেনি।তাকে খুন করা হয়েছে। দয়া করে কারোরে জানান, এটা খুন। আমার ভাই রুমীকেও খুন করা হয়েছে। আমি জানি না রুমীর কবর কোথায়। আমি লাস্ট মানুষ যে জানে এটা খুন। নীলা ভাবি, (সালমানের মা) আপনার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। আপনি কিছু করেন। দয়া করে কিছু করেন। সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই। আপনার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। ’
রুবী নামের ওই নারীর এমন বক্তব্য ইউটিউব ও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুরহস্য। ১৯৯৬ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। কিন্তু পুলিশি তদন্তে সেই রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি আজও। আর এরই মধ্যে গত ৬ আগস্ট ইউটিউবে এবং গতকাল সোমবার বিউটিশিয়ান রুবীর বক্তব্য নিয়ে ফের আলোচনায় এসেছে সালমান হত্যার বিষয়টি।
তিন মিনিটের রুবীর বক্তব্য ভিডিও করার সময় তাঁকে কাঁপতে দেখা যায়। তিনি বারবার সালমানের মা নীলা চৌধুরীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। ভিডিওতে রুবীকে আতঙ্কগ্রস্ত দেখা যায়।
ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমাকেও খুন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দয়া করে আমার জন্য দোয়া করেন, আমি ভালো নাই। আমি কী করব আমি জানি না, শুধু এইটুকু জানি, সালমান শাহ, মানে ইমন আত্মহত্যা করেনি। তাকে সামিরা, আমার স্বামী ও সামিরার পরিবারের সবাই মিলে খুন করেছে। প্লিজ কিছু করেন। এরা কী মানুষ, পুরো চায়নিজ কমিউনিটি আপনারা জানেন না। আমি ভেগে এসেছি এইখানে। দয়া করে আপনারা কাউকে জানান। আমার ছোট ভাই রুমীকে দিয়ে খুন করানো হয়েছে। পরে রুমীকেও খুন করানো হয়েছে। আমি জানি না রুমীর কবর কোথায় করা হয়েছে। রুমীর লাশ তুলে যদি আবার পোস্টমর্টেম করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে তাকে খুন করানো হয়েছে। এর মধ্যে আমার খালু মমতাজ হাসান আছে, খালাতো ভাই জুম্মা থাকতে পারে। আমার হাজব্যান্ড জ্যানলিন চ্যান, জন চ্যান নামে বাংলাদেশে পরিচিত ছিল, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে সাংহাই চায়নিজ রেস্টুরেন্টের মালিক ছিল। আমিই লাস্ট মানুষ যে কিনা খুনের বিষয়ে জানে। আর আমি এটা প্রমাণ করতে পারব ইনশাল্লাহ। দয়া করে একটু সাহায্য করেন, একটু সাহায্য করেন। এরা বাসার মধ্যে আমাকেও খুন করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সুযোগ করতে পারেনি। আমি আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তুমি আমাকে খুন করতে চাও না? ও আমাকে বলেছে, তোকে তো খুন করলে সেই কবেই খুন করতাম। এটা তো আমি জানি যে আমাকে খুন করতে চায়, কারণ আবার কেসটি ওপেন হয়েছে। প্লিজ দয়া করে কিছু করেন। ’
সালমানের মাকে উদ্দেশ করে রুবী বলেন, ‘নীলা ভাবি, আপনার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। আমি ভেগে আসছি। না হলে আমাকেও মেরে ফেলত ওরা সবাই মিলে। ’
সালমান শাহর বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন রাবেয়া সুলতানা রুবী। তিনি সালমান শাহ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও। ইউটিউবে ছাড়া ভিডিওতে তিনি স্বীকার করেন, নব্বইয়ের দশকের সবচেয়ে সফল এ নায়ককে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় থাকা রুবী ফেসবুকেও সেই ভিডিও আপলোড করেছেন, যেটি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।
এর আগেও বিভিন্ন সময় ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন তিনি। তখন বরাবরই সালমান শাহর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। উল্টো সালমান ও তাঁর মাকে বিভিন্নভাবে অভিযুক্ত করেছেন।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জনপ্রিয় চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ নিহত হন। তখন এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়। সালমানের বাবা ১৯৯৭ সালের ১৯ জুলাই রিজভি আহমেদ নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে বাসায় অনধিকার প্রবেশের অভিযোগ এনে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন।