বিএফডিসিতে ঢুকলেই চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির বাম পার্শ্বে সুন্দর পরিপাটি একটি কক্ষ সবার নজর কাড়ে। এটিই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কক্ষ। অনেক দর্শনার্থী পছন্দের প্রিয় তারকাকে এক ঝলক দেখার জন্য এখানে প্রায়ই ভীড় জমান। চলতি বছরের ৫ই মে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ১৪তম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুই বছর মেয়াদি এই কমিটির নতুন সভাপতি হিসেবে শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসছেন অভিনেতা মিশা সওদাগর। বাংলা চলচ্চিত্রে দীর্ঘ সময় ধরে খলনায়ক হিসেবে রাজত্ব করছেন তিনি। বেশিরভাগ ছবিতে দুষ্টু চরিত্রে অভিনয় করলেও বাস্তব জীবনে খুবই সাদামাটা জীবন যাপন করেন মিশা। ছবির সংখ্যা মনে রেখে কাজ করেন না এ অভিনেতা। বিভিন্ন চরিত্রে সাবলীলভাবে অভিনয় করে দর্শকের কাছে তিনি অল্প সময়ে পেয়েছেন তারকাখ্যাতি। এ পর্যন্ত তার অভিনীত ৮০০ ছবি মুক্তি পেয়েছে। মাঝে বেশকিছুদিন নানা কারণে মনোযোগী হতে না পারলেও আবারো নিয়মিত কাজ শুরু করেছেন তিনি। নিজের বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে মিশা সওদাগর মানবজমিনকে বলেন, আমি বর্তমানে শাহীন সুমনের ‘মাতাল’ ছবির শুটিং করছি। এছাড়া গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’, সৈকত নাসিরের ‘পাষাণ’ ছবির ডাবিং শেষ করলাম। সামনে রকিবুল আলম রকিবের ‘প্রেমিক’ ছবির কাজ শুরু হবে। এছাড়া আরো বেশকিছু ছবির কাজ শুরু করবো। আসলে আমি অনেক কাজ করতে চাই না। লম্বা সময় ধরেই তো কাজ করছি। মাঝে শিল্পী সমিতির নির্বাচনের পর যৌথ প্রযোজনার নীতিমালার সঠিক নিয়মে যেন ছবি নির্মাণ হয় এ বিষয়ে বেশকিছু আন্দোলনে দেখা যয় মিশাকে। এমনকি রাজপথে নেমে মিছিলও করেছেন তিনি। সে সময় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৮টি সংগঠনের সমন্বয়ে চলচ্চিত্র পরিবার নামে গঠিত ঐক্যজোট শাকিব খানের সঙ্গে কাজ করবে না বলে ঘোষণা দেয়। এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে মিশা সওদাগর বলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের উন্নতির স্বপক্ষে ছিল আমাদের আন্দোলন। আর যৌথ প্রযোজনার ছবির বিপক্ষে আমরা কখনও ছিলাম না। ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই নীতিমালা মেনে যৌথ প্রযোজনার ছবি হোক। আর শাকিব খান ও আমি একটানা দশ বছরের বেশি সময় ধরে একসঙ্গে কাজ করেছি। আমাদের অভিনীত বেশিরভাগ ছবিই তো ব্যবসাসফল হয়েছে। শাকিব খানের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। আমি চাই ইন্ডাস্ট্রিতে অভিমান ভুলে সঠিক নিয়ম মেনে সবাই একসঙ্গে কাজ করুক। আরো পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, এক ফ্লোরে শাকিব, অন্য ফ্লোরে জায়েদ, সাইমন, বাপ্পি বা অন্যরা কাজ করুক। আমি চাই আমি কাজ না করলেও অন্যরা কাজে ব্যস্ত থাকুক। ইন্ডাস্ট্রির শিল্পী ও কলাকুশলী কেউই যেন আর বসে না থাকে। প্রতিটি শুটিং ফ্লোর হোক উৎসবমুখর। চলচ্চিত্রে আমরা যারা কাজ করি তারা একটি পরিবার। তাই আশা করা যায় সবাইকে এক ছাদের নিচে আনা সম্ভব। তবে চলচ্চিত্র শিল্পের বর্তমান অনৈক্যের কারণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মিশা সওদাগর। তিনি দ্বিধাবিভক্ত সব পক্ষকে দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নের স্বার্থে একযোগে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অনুরোধ জানান। মিশা বলেন, চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে বর্তমানে যে পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থান তৈরি হয়েছে, এর ফলে চলচ্চিত্র জগত চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। ইতিমধ্যে সরকার যৌথ প্রযোজনার সুষ্ঠ নিয়ম ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে। তাই আমার অনুরোধ চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে চলচ্চিত্রকাররা ঐক্যবদ্ধ হোন। তিনি আরো বলেন, আমি কার্যনির্বাহী সদস্য থেকে সাধারণ সম্পাদক ও সবশেষে এবার সভাপতি হিসেবে শিল্পী সমিতিতে নির্বাচিত হয়েছি। তাই শিল্পীদের সবাইকে নিয়ে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই।