উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত জাতিসংঘের নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলোর খসরা তৈরি করায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার ওয়াদা করেছে দেশটি। নিষেধাজ্ঞার খসরা তৈরি করার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রকে চড়া মূল্য দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ বলেছে, শনিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলো আমাদের সার্বভৌমত্ব্বের ওপর হস্তক্ষেপ করার একটি পদক্ষেপ। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। প্রসঙ্গত, বেশ কয়েকবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও বন্ধ হয়নি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা। আর তাই শনিবার, এই অস্বাভাবিক বেপরোয়া আচরণ বন্ধের প্রচেষ্টায় দেশটির ওপর বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। আর এই নিষেধাজ্ঞার খসরা তৈরি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিবিসির খবরে বলা হয়, এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের জবাবে সোমবার উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, তারা তাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অব্যাহত রাখবে। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ বলেছে, ‘যতক্ষণ আমরা আমেরিকা থেকে হুমকির মুখে আছি ততক্ষণ, পিয়ংইয়ং আমাদের আত্মরক্ষামূলক পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আলোচনায় বসবে না।’ আরো বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের অপরাধের সাজা ভোগ করতে হবে…হাজার গুণ বেশি।’ উল্লেখ্য, এখানে যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধ বলতে নিষেধাজ্ঞাগুলোর খসরা তোইরিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
ম্যানিলায় চার-দেশের বৈঠক: এদিকে রোববার ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় একটি বৈঠকে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মন্ত্রীদের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়েছে। বৈঠকে চীন, রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী রি ইয়ং হু। দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমে বলা হয়, অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান ন্যাশন্স আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক ডিনারে রি ইয়ং হুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাং কিয়ুং হুয়া। ওই বৈঠকে কিয়ুং হুয়া উত্তর
কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির উদ্দেশে সমঝোতা বৈঠকে বসতে বললে তা প্রত্যাখ্যান করেন ইয়ং হু। বিবিসির খবরে বলা হয়, দক্ষীণ কোরিয়ার সরকারি কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, কিয়ুং হুয়ার প্রস্তাব আন্তরিক ছিল না বলেই তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ইয়ং হু। দক্ষিণ কোরিয়ার বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ কিয়ুং হুয়াকে উদ্ধৃত করে বলে, ‘আমি তাকে (ইয়ং হু) বলেছিলাম যে সকল রাজনৈতিক এজেন্ডা একপাশে সরিয়ে রেখে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হওয়াটা একটি জরুরি বিষয় যেটি যতদ্রুত সম্ভব করা উচিত। আর তাকে এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে বলেছিলাম।’ কিয়ুং হু আরো জানান, তার ধারোনা মতে, এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পেছনে দেশটির ওপর আরোপিত নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ছিল। এ বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও্যাং ই সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মনে হয় যে, ইয়ং হু দক্ষিণ কোরিয়ার প্রস্তাবটি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেন নি।’ উত্তর কোরিয়া ২০০৬ সাল থেকে, তাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আধা-ডজন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছে। দেশটির নেতা কিম জিং উনের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক হুমকির মুখে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।