সিলেট মিডিয়া : কোম্পানীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ২০২ রাউন্ড গুলি ও ৬টি টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে।
উপজেলা সদরের পার্শ্ববর্তী লাছুখাল ও শিলেরভাঙ্গা পাশাপাশি দু’টি গ্রাম। লাছুখাল গ্রামের লাছুখাল বাজারে শিলেরভাঙ্গা গ্রামের লোকজনও ব্যবসা করেন। এখানে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রায়ই গোলমাল হয়। গত মঙ্গলবার রাতে তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এ সময় শিলেরভাঙ্গা গ্রামের সফিকুল ইসলাম (৪০), আব্দুর রহমান (২৯), কাজল (৪৫) ও তার ভাই আমিনুল ইসলাম (২৯) আহত হয়ে কোম্পানীগঞ্জে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় কাজলকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। খবর পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এর জের ধরেই বুধবার সকাল ৯টার দিকে উভয় গ্রামের লোকজন ফের সংঘর্ষে জড়ায়। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলা কয়েক দফা সংঘর্ষের সময় উভয় গ্রামের লোকজন ধারালো অস্ত্র, রাম দা, বল্লম ও লাঠিসোঁটা ব্যবহার করেন। এসময় কয়েকবার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ পাথর ছোঁড়াছুড়িও হয়। সংঘর্ষে লাছুখাল গ্রামের মুছা মিয়া (২৩), ইব্রাহিম (৫২), মিলন (২৩), বসু মিয়া (৪০), সিরাজ মিয়া (৩৫), মজিদ মিয়া (৪৫) ও শিলেরভাঙ্গা গ্রামের আব্দুল বাছির (২৬), জামির হোসেন (২০), গোলেছা বেগম (৭০) ও চাঁনপুর গ্রামের রহমত আলী (২১) আহত হন। তাঁদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ মুছা মিয়া, ইব্রাহিম ও রহমত আলীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অন্যদের চিকিৎসা চলছে কোম্পানীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষের কয়েকটি ঘরবাড়ি-দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটে বলে জানান গ্রামবাসী।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে সিলেটের রিজার্ভ পুলিশসহ কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ সক্রিয় অবস্থান নেয়। এ সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ফাঁকা গুলি করে এবং টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ হ্যান্ড মাইক হাতে নিয়ে উভয়পক্ষকে সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান।
এ সময় সিলেট থেকে আসা ম্যাজিস্ট্রেট রায়হান মেহবুব, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি বায়েছ আলম, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী, চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, চেয়ারম্যান মোঃ বাবুল মিয়াসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও এলাকার মুরব্বিরাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান।
পরে সকলের হস্তক্ষেপে উভয় গ্রামের নেতৃবৃন্দকে ডেকে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টি সালিশ বিচারে নেয়া হয়। এসময় বৈঠকে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য মোঃ কামরুজ্জামান, ইউপি সদস্য মোঃ শেখ ফরিদ, ইউপি সদস্য মোঃ নানু মিয়া, লাছুখাল গ্রামের মুরব্বি হাজী আব্দুল মনাফ, হাজী ওমর আলী, হাজী আব্দুর রউফ, মুক্তিযোদ্ধা বাছির মিয়া, শিলেরভাঙ্গা গ্রামের মাওলানা সামছুজ্জামান, অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য নুরুজ্জামান, মোঃ কিবরিয়া ও মোঃ রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ জানান, পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সালিশ বিচারে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি বায়েছ আলম জানান, আধিপত্য নিয়ে দুই গ্রামের লোকজনদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে ও গতকাল বুধবার উভয় গ্রামের লোকজন মাইকিং করে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। তবে, পুলিশের সক্রিয় ভূমিকার কারণে উভয় পক্ষ বড় ধরনের সংঘর্ষের মুখোমুখি হতে পারেনি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসময় পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২ রাউন্ড শট গানের গুলি ও ৬টি টিয়ারসেল ছুঁড়তে হয়েছে বলে জানান ওসি।