এসবিএন ডেস্ক:
বাবা-মা স্বপ্ন দেখতেন, তাদের ছেলে বড় হয়ে পাইলট হবে। এই স্বপ্ন ভেতরে ভেতরে লালন করতেন আবু হায়দার রনিও। কালের স্রোত সেই স্বপ্ন থেকে অনেকদূরে নিয়ে এসেছে রনিকে। বিমান চালানো পাইলট না হলেও হয়ে উঠেছেন দারুণ গতিতে বল ‘চালানো’ এক ফার্স্ট বোলার।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল ) শুরুর আগে সেভাবে আলোচনায় ছিলেন না আবু হায়দার রনি। বিপিএল শুরুর সপ্তাহ খানেকের মধ্যে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে আলোচনায় চলে আসেন নেত্রকোনায় জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটার চলতি বিপিএলে সবচেয়ে বেশি উইকেট এখন তার পকেটে। ১১ খেলায় ২১ উইকেট নিয়ে সবার উপরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের এই বাঁহাতি পেসার।
শুধু বিপিএলই নয়, এর আগে ঘরোয়া ক্রিকেটেও অসাধারণ খেলেছেন তিনি। ২০১২ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে, কাতারের বিপক্ষে ৫.৪ ওভার বোলিং করে ১০ রানের খরচায় নয় উইকেট শিকার করেছিলেন এই রনি।
আগামীর সম্ভাবনাময় এই তারকা নিজের ক্রিকেটার হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে বলেন, ২০০৭ সালে স্কুল ক্রিকেটের মধ্যদিয়ে ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত হই। সে বছরই অনূর্ধ্ব-১৪ দলের হয়ে ক্রিকেট খেলার সুযোগ হয়। পরবর্তীতে অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলি। নেত্রকোনায় সজল স্যারের হাত ধরে ক্রিকেটে আমার হাতে-খড়ি। মূলত ওনার হাত ধরেই আমি ক্রিকেটার হয়ে উঠি।
রনি ২০১২ ও ২০১৪ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেলেও সেভাবে পারফরম করতে পারেননি। তবে বরাবরের মতোই ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল করে গেছেন। ঢাকা ওরিয়েন্ট ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগে ১১ ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন ১৮ উইকেট। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ভিক্টোরিয়ার হয়ে নিয়েছেন ১৭ উইকেট। ঘরোয়া ক্রিকেট ভালো খেলায় সুযোগ হয় বিসিবির হাইপারফরম্যান্স ইউনিটে (এইচপি)।
ক্লাব ক্রিকেটে নিজের অভিষেক ম্যাচ প্রসঙ্গে রনি বলেন, ‘২০১২ সালে রাজশাহীর বিপক্ষে ঢাকা মেট্রোর হয়ে লিগে যখন আমার অভিষেক হয়, ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে আমি তিন উইকেট শিকার করেছিলাম। সেই সময় আমার কোন ধারণাই ছিলো না যে আমাকে ঢাকা মেট্রোর হয়ে খেলতে ডাকবে। খেলার আগের দিন আমি জানতামই না যে আমাকে খেলাবে।’
বিপিএলের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান জানিয়ে রনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছে। এটা আমি ধরে রাখতে চাই। কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কিন্তু ইনজুরিতে পড়ে গেলে পারফরম্যান্স আপডাউন করে। এখন ভালো হচ্ছে বলে সবাই ভালোই বলছে। ফর্ম যখন খারাপ হবে, সবাই খারাপ বলবে। উত্থান-পতন জীবনে থাকবেই। আরো ভালো করা দরকার। আর এটার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই।’
যখন থেকে ক্রিকেট সম্পর্কে টুকটাক বুঝতেন, তখন থেকেই তার আইডল মাশরাফি বিন মর্তুজা। স্বপ্ন দেখতেন তার মতো ক্রিকেটার হওয়ার। এমনটি জানিয়ে ১৯ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বলেন, আমি যখন ক্রিকেট একটু একটু বুঝি, তখন বিটিভিতে (বাংলাদেশ টেলিভিশন) জাতীয় দলের খেলা দেখতাম। তখন থেকেই স্বপ্ন ছিলো, তার সাথে দেখা করার, তার পাশাপাশি হাঁটার, মাশরাফি ভাইয়ের মতো ক্রিকেটার হওয়ার। এখন তার সাথে খেলছি, একই সাথে বোলিং করছি, ড্রেসিংরুমে শেয়ার করছি। এই ভালো লাগাটা কাউকে বলে বুঝাতে পারবো না।
বিপিএলের আগেই দারুণ পারফর্ম করে ফেললেও এই বিপিএলটাই যে তাকে পরিচিতি এনে দিয়েছে। তাই এই টুর্নামেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই, আমার মতো তরুণ ক্রিকেটারদের আলোচনায় আসার জন্য বিপিএল অনেক কাজে দিয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের কিছু খেলায় এর চেয়েও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। কিন্তু সেটা মিডিয়ায় আসে না, বা অনেকে দেখে না। এটা দেশে-বিদেশে সবাই দেখেছে। এখানে ভালো করছি, এটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য একটা ভালো দিক। এবার রনির চ্যালেঞ্জ এই পরিচিতি আর পারফরম্যান্সকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া।