এসবিএন ডেস্ক:
বেশ কিছুদিন রাজধানীতে আসেন না হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী। তার চলাফেরা অনেকটাই সীমিত এবং প্রশাসন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। হাট-হাজারিতে আল্লামা শফীর দফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী বহু মাহফিলে হুজুরকে দাওয়াত করা হলেও অবাধে সব জায়গায় যাওয়ার সুযোগ তার নেই। এক ধরনের অলিখিত বিধিনিষেধ তার ওপর আরোপিত আছে। তবে গত শুক্রবার তিনি হঠাৎ করেই ঢাকায় আসেন। রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ায় এক ইসলামী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে তার যোগদানের কথা ছিল। ঢাকা পৌঁছার পর বিমানবন্দরের প্রবেশপথে বায়তুস সালাম মাদরাসায় তিনি যাত্রাবিরতি করেন। ৬ ডিসেম্বর থেকে মসজিদ-মাদরাসায় গোয়েন্দা নজরদারি নিয়ে সরকারের বক্তব্য ও আল্লামা শফীর বিবৃতিতে জনমনে এক ধরনের উদ্বেগের জন্ম দেয়। আল্লামা শফীর বিবৃতিকে বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিয়ে পুলিশ সদর দফতর একটি বিবৃতি দিলে সারা দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের ভেতর নতুন উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। পুলিশ সদর দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের ‘কিছু’ নেতা এই বিবৃতি দেন। এ বক্তব্যে হেফাজত-সমর্থক আলেম-ওলামা ও ইমামদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা বলেন, আল্লা শফী, জুনায়েদ বাবুনগরীসহ হেফাজতের সিনিয়র সব নেতার বিবৃতিকে কোন বিবেচনায় ‘কিছু’ নেতার বিবৃতি বলা হলো? তাছাড়া এতে অসত্য বা বিভ্রান্তিই বা কোথায় ছিল। গত পরশু আশুলিয়ার মাহফিলে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে পরোক্ষভাবে বাধা দেয়া হয়। সভায় যোগ না দিয়ে চট্টগ্রাম ফিরে যাওয়ার জন্য দূর থেকে চাপও দেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হঠাৎ আল্লামা শরফী ঢাকায় এলে শুক্রবার জুমার পর রাজধানীর বহু ইমাম, খতিব ও আলেম-ওলামা তার সাক্ষাৎ লাভের আশায় বিমানবন্দর-সংলগ্ন মাদরাসায় ছুটে যেতে থাকেন। তারা মসজিদে মসজিদে গোয়েন্দা নজরদারি, ইমামদের বয়ান রেকর্ড করা, তালিকা তৈরি ও ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি প্রসঙ্গে তার মুখ থেকে কোনো নির্দেশনা পেতে চাচ্ছিলেন। সমাবেশ বড় হলে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ হুজুরের বয়ানের ব্যবস্থা করলে পুলিশ বাধা দেয়। তখন আলেম-ওলামারা বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে যান। আল্লামা শফী ভিন্ন পথে আশুলিয়ার উদ্দেশে রওনা হলে আলেম-ওলামারা ও অনেকে আশুলিয়া চলে যান। ইসলামী সম্মেলনে আল্লামা শফী বলেন, মুসলমানদের ঈমান আমল মজবুত করা চাই। সব বাধা ধৈর্য ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে। ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। ইসলামে আছে সত্যের জন্য জিহাদ। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনের সবকিছু দিয়ে ত্যাগ, সাধনা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়াই মুসলমানের কাজ। এ ক্ষেত্রে সন্ত্রাস ও উগ্রতার কোনো সুযোগ নেই। সব কাজ আল্লাহর হুকুম ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত মোতাবেক করতে হবে। দীনের কথা নির্ভয়ে বলতে হবে। আলেম-ওলামা, ইমাম, খতিব ও ওয়ায়েজরা কেবল আল্লাহকেই ভয় করবেন। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামের কথা মানুষকে পৌঁছে দিন। অন্যায়, পাপাচার, দুর্নীতি ও গুনাহের বিরুদ্ধে কথা বললে যদি কেউ ক্ষিপ্তও হয়, তাহলে এ সবের পরোয়া করবেন না। কারণ হক কথা না বললে আল্লাহর কাছে আপনাকে জবাব দিতে হবে। ইসলামের শান্তির বাণী মানুষকে পৌঁছে দিন, পাশাপাশি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলুন। দুর্নীতি, পাপাচার ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকুন। বিমানবন্দর এলাকা থেকে আশুলিয়ার পথে রওয়ানার সময় আলেম-ওলামারা ভিড় করলে তিনি গাড়ির কাচ খুলে কয়েকজনের সাথে কথা বলেন। আগ্রহীদের মাথায় হাত রেখে ফুঁক দেন ও সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধরতে বলেন। পুলিশের নজরদারি থাকায় দ্রুত তার গাড়ি এলাকা ছেড়ে যায়।