এসবিএন ডেস্ক:
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের রাজনীতি সংক্রান্ত নতুন আন্ডার সেক্রেটারি টমাস এ শ্যানন বলেছেন, বাংলাদেশের বিজয়ের পরপরই সিনেটর টেড কেনেডি ঢাকা সফর করেন। সেসময় তিনি এই বার্তা পৌঁছে দেন যে ‘আমেরিকা বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়।’ আমেরিকা এখনও বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। আমি শুধু যোগ করতে চাই, বাংলাদেশ গুরুত্ব বহন করে।
রবিবার বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে (বিআইআইএসএস) আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
টমাস শ্যানন বলে, বাংলাদেশিরা এই বিশ্বের সবচেয়ে সহিষ্ণু, উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং উদ্যোগী মানুষের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সম্ভাবনা উন্নয়নশীল অনেক দেশের কাছে একটি ঈর্ষার বিষয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ লিঙ্গসমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বিপুল সাফল্য দেখিয়েছে। এর অনেকাংশই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে সম্ভব হয়েছে।বাংলাদেশের সাফল্যের অনেকখানিই অর্জিত হয়েছে নারীকে উন্নয়ন কর্মসূচির সম্মুখে রেখে। তবে নারীর প্রতি সহিংসতা কমানো, বাল্য বিয়ে এবং জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধ করাসহ আরো অনেক বিষয়ে সাফল্য অর্জন এখনও বাকি রয়েছে। এই বিষয়গুলোর ভয়ঙ্কর সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং স্বাস্থ্যগত নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
শ্যানন বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও অনেক দিন ধরে নেতৃস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে এবং দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে। এটি হতে পারে এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক শক্তিকেন্দ্র এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্যে মানুষ এবং পণ্য পরিবহনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক করিডোর উদ্যোগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সচল রাখার সাহায্য অব্যাহত রাখবে। ইতিমধ্যেই আমরা বাংলাদেশের বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশগুলির অন্যতম এবং আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যার পরিমাণ ৬০০ কোটি ডলারেরও বেশি।
টমাস শ্যানন বলেন, জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলার কথা যখন আসে তখনও বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে একটি উদাহরণ। তাই আমরা আরো ভাল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ও আপদকালীন ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র গড়তে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার আশা ব্যক্ত করছি যেন তীব্র ঝড় ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার প্রভাব আরও কমানো যায়।
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় আবার এগিয়ে আসছে এবং আমি আশা করছি গণতন্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে পুনর্নিশ্চিত করতে প্রত্যেকেই এই সুযোগটি সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে চাইবে। প্রত্যেকটি দেশ, সেটি যুক্তরাষ্ট্র হোক বা বাংলাদেশ তাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা তখনই অর্জন করতে সক্ষম হয় যখন জাতীয় বিতর্ক এমনকি মতানৈক্য একটি শান্তিপূর্ণ, উন্মুক্ত এবং নিরঙ্কুশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আসে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কাউন্সিলর বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন হোক আর নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন, অথবা উন্নয়ন যাই হোক না কেন বিগত চল্লিশ বছর ধরে এটি প্রতীয়মান যে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ একত্রে কাজ করে অসাধারণ সব অর্জন লাভ করতে পারে এবং আগামী চল্লিশ বছরও তার ব্যতিক্রম হবে না। কারণ আমাদের অংশীদারিত্বটি এমনই যার শক্তি, সহিষ্ণুতা এবং সম্ভাবনা সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়।