এসবিএন ডেস্ক:
সিন্দুক রয়েছে, কিন্তু চাবি নেই। আইএস-এর অবস্থা এখন অনেকটা এই রকম। কারণ তহবিল যিনি সামলাতেন, কোথায় কত টাকা-পয়সা রয়ছে, কোথায় কত দরকার— এই সব কিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব যাঁর কাছে থাকত, সেই আবু সালেহর মৃত্যু।
মার্কিন বিমান হামলায় গত মাসেই নিকেশ হয়েছেন আইএস কোষাধ্যক্ষ আবু সালেহ। তহবিল ম্যানেজার তথা সংগঠনের সবচেয়ে অভিজ্ঞ জঙ্গিদের অন্যতম আবু সালেহ’র মৃত্যুতে টালমাটাল বাগদাদির সাম্রাজ্য।
অর্থ সঙ্কট এমনিতেই ছিল। তা এখন আরও তীব্র সালেহ’র মৃত্যুতে। মার্কিন বাহিনী সালেহ-নিকেশকে বিরাট সাফল্য বলে মনে করছে। আইএস-ও কিন্তু হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে আবু সালেহ’র অনুপস্থিতি। এক সঙ্গে অনেকগুলি সমস্যা তৈরি হয়েছে পশ্চিম এশিয়ার এই ভয়ঙ্কর জঙ্গি শিবিরে।
প্রথমত, আইএস-এর তহবিল কোথায় জমা থাকে, কীভাবে সেই টাকা খরচ হয়, বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন থাকা বাহিনীর কাছে কীভাবে টাকা পাঠানো হয়, সে সব তথ্যই আবু সালেহ’র কাছে থাকত। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেন। জঙ্গি সংগঠনের গোপনীয়তার রীতি মেনে, আবু সালেহ তহবিল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য কাউকে জানতে দিতেন না। সালেহ আচমকা খতম হয়ে যাওয়ায়, অন্যরা তহবিল ঠিকমতো সামলাতে পারছেন না। কত টাকা রয়েছে, সে টাকা কোথায় কোথায় রাখা রয়েছে— এই তথ্য জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে বাগদাদির নতুন তহবিল ম্যানেজারদের।
দ্বিতীয়ত, আবু সালেহ জানতেন দ্রুত টাকা জোগাড়ের উপায় কী কী। হঠাৎ টাকার দরকার হলে, কোন কোন উৎস থেকে তা আসতে পারে, তা নাকি নিমেষে বাতলে দিতেন এই শীর্ষ আইএস জঙ্গি। আচমকা বোমা হামলায় তাঁর মৃত্যু হওয়ায়, আবু সালেহ কাউকে বলে যেতে পারেননি, ‘ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট’ কী ভাবে করেন তিনি।
তৃতীয়ত, আইএস-এর সঙ্কট এখন তীব্র। আমেরিকা। ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া এক সঙ্গে হামলা চালাচ্ছে আইএস ঘাঁটিতে। ক্ষয়ক্ষতি সামলানোর জন্য প্রচুর অর্থের দরকার। নতুন করে তহবিল জোগাড়ের কাজটাও আবু সালেহ-ই সামলাতেন। তুমুল বিমানহানার মুখে পড়ে আইএস যখন অর্থাভাবে ভুগছে, তখন আবু সালহে’র মতো দ্রুত তহবিল জোগাড় করার একটাও লোক নেই গোটা সংগঠনে।
আক্ষরিক অর্থেই দিশাহারা অবস্থা আবু বকর আল বাগদাদির জঙ্গি সংগঠনটির। অর্থাভাব আর তহবিল বণ্টনে চূড়ান্ত অব্যবস্থার জেরে অসন্তোষ দেখা দিতে শুরু করেছে আইএস-এর সেনাবাহিনীতে। বিভিন্ন এলাকায় জখমদের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। কোথাও আবার খাবার এবং যুদ্ধাস্ত্রের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অল্প কিছু দিনেই আইএস-এর এই সঙ্কট আরও তীব্র হবে। আবু সালেহ খতম হওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ কাটতেই এমন ভয়াবহ অর্থ সঙ্কটে আইএস। আর কিছু দিন গেলে সঙ্কট আরও বাড়বে।