এসবিএন ডেস্ক:
বাংলাদেশে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে আজ (রবিবার)। আগামীকাল থেকে স্পষ্ট হয়ে যাবে দলগত এই নির্বাচনটিতে কোন দলে কতজন প্রার্থী বিদ্রোহী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। কাল থেকেই প্রতীক নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা। আচরণবিধি তদারকিতে আজ মাঠে নামছেন নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমরা। কিন্তু এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কিছু কিছু ভূমিকার প্রেক্ষাপটে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এই নির্বাচনকে শেষ পর্যন্ত সরকারের প্রভাবমুক্ত কতটা রাখা যাবে আর নিরপেক্ষতা-গ্রহণযোগ্যতাই বা কতটা থাকবে। সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াৎ হোসেন বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলছেন, পৌর নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড :
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াৎ হোসেনের ভাষায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচন একপেশে হয়ে থাকে। কারণ একটি সরকারের অধীনে হয়ে থাকে। সরকারের একটি প্রভাব মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর থাকে। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে যেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত তেমন পাকাপোক্ত হয়নি, সেই সব জায়গায় কিন্তু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে যেটাকে বোঝায় সেটা ততটা থাকে না। আর রাজনৈতিক দল ও সরকারের সহযোগিতা যদি নির্বাচন কমিশন না পায় তাহলে তাদের পক্ষে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা খুব কঠিন হয়ে যায়।
আইন প্রয়োগে কমিশনের অনীহা :
সাখাওয়াৎ হোসেন বলছেন, পূর্ববর্তী স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে নির্বাচন কমিশনকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। একটা হচ্ছে প্রচেষ্টা, আরেকটা চেষ্টা না করে ছেড়ে দেওয়া। এখন সেটা থেকে নির্বাচন কমিশন যদি বের হতে না পারে এবং এখন পর্যন্ত তাদের যে নীরবতা পরিলক্ষিত হচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে তারা কর্তৃত্বটা স্থাপন করতে পারেনি। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, প্রভাবশালী লোকের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া নিষিদ্ধ করে একটি বিধি আছে, সেই বিধি প্রয়োগ করার কথা কমিশনের। কিন্তু এই নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে কমিশন এই বিধি প্রয়োগের দায়িত্ব মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের নিম্নস্তরের কর্মকর্তাদের ওপর বর্তিয়েছে। অর্থাৎ প্রভাবশালী মানুষের মুখোমুখি হবার যে চ্যালেঞ্জ সেখান থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছে কমিশন, এটাকে কমিশনের ক্ষমতার অভাব না বলে মি. হোসেন বর্ণনা করছেন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মন-মানসিকতার অভাব হিসেবে।
দলগত নির্বাচন :
এর আগে যখন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়নি, কিন্তু সেটাতেও দলগুলোর অংশগ্রহণ এত ব্যাপক হয়ে গেল যে পরের দিকে সেটাকে আর নির্বাচন কমিশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি বলে উল্লেখ করছেন সাখাওয়াৎ হোসেন। এখন সেখানে দল সরাসরি অংশগ্রহণ করছে এবং মি. হোসেনের ভাষায় সরকার ও সরকারি দল এখানে একীভূত হয়ে আছে। এখানে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা নির্বাচন কমিশনের জন্য আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ। সবগুলো চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করে ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াৎ হোসেন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এই নির্বাচনও হয়তো দেখা যাবে কমিশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।